ময়মনসিংহে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মশার উপদ্রব। দিনের বেলায় কিছুটা রেহাই পাওয়া গেলেও রাতে নিস্তার মিলছে না। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় মশার উৎপাত বাড়ছে বলে দাবি নগরবাসীর। মশক নিধনে মাঝে মধ্যে ওষুধ ছিঁটানো হলেও এতে কোনো কাজ হচ্ছে না বলে দাবি তাদের। মশা নিধনের ওষুধের কার্যকরিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
নগরবাসীর দাবি, নিয়মিত ভালো মানের মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করলে মশার যন্ত্রণা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যেত। এ ছাড়াও নগরীর ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
বিগত বছরের এ সময়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিভাগের লোকজন এলাকার নালা-নর্দমা ও ভবনের আশপাশে মশা জন্মাতে পারে এমন স্থানে ওষুধ ছিঁটিয়ে দিতেন। তবে এ বছর নালা-নর্দমায় মশার ওষুধ ছিঁটাতে মসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের তেমন দেখা যায়নি।
যদিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দাবি, মশা নিধনে নগরীর নালা-নর্দমায় নিয়মিত ওষুধ ছিঁটানোর কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে সোমবার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে খোঁজ নিতে ময়মনসিংহ নগরীর বিপিন পার্ক জুবলীঘাট এলাকায় গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী সোহেল রানা বলেন, ‘প্রতি বছর শীতের পর মসিকের লোকজন মশা নিধনের ওষুধ ছিঁটালেও এ বছর মশা মারার কোনো ওষুধ ছিঁটাতে দেখা যায়নি। দিনের বেলায় ঘরে বসতে পারলেও রাতের বেলা মশার যন্ত্রণায় কোনো শান্তি নাই।’
ওই এলাকার মুদি দোকানি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে মশা মারার ওষুধ ছিঁটালেও মশা কমেনি। দিনের বেলায় মশার উপদ্রব কিছুটা কম থাকলেও রাতে শান্তি নাই।’
মসিকের ২৭ ওয়ার্ডের নয়াপাড়া খালপাড় এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, ‘এই এলাকার খালে জমে থাকা কচুরিপানা পরিষ্কার করলেই মশার উপদ্রব কিছুটা কমবে।’
ওই এলাকার ফরিদা পারভিন বলেন, ‘ড্রেন ও ময়লা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে মশা কমবে না। মশার যন্ত্রণায় সন্ধ্যার পরে ছেলেমেয়েরা পড়তে বসতে পারে না।’
একই এলাকার মৃত বিজন রায়ের স্ত্রী বানী রায় বলেন, ‘নিয়মিত মশা মারার ওষুধ দিলে মশা কমবে। তবে, শীতের পরে একবার মশা মারার ওষুধ দিতে দেখেছি, পরে আর দেখেনি। সন্ধ্যার পর কয়েল জালিয়ে মশা তাড়িয়ে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দেই। এরপরও মশারির নিচে মশা ভনভন শব্দ করে। পরে আবার ঘুম থেকে উঠে মশা মারতে হয়। এভাবেই আমাদের রাত কাটে।
বাসার সামনের বড় জলাশয়ে কচুরিপানা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো পরিষ্কার করলেও মশা কিছুটা কমে আসত।’
একই ওয়ার্ডের আকুয়া পূর্ব নয়াপাড়ার বাসিন্দা কেরামত আলী মশা নিধনের ওষুধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, ‘যে ওষুধ মশা মারতে ছিঁটানো হয় সেই ওষুধে মশা মরে না। এসব ওষুধ মশা মারতে কতটা কার্যকরী তা পরীক্ষা করা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মাসে দুদিন দেখেছি সিটির লোক মশা মারার ফগার মেশিন নিয়ে আসছিল। পরে আর দেখি না।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এইচকে দেবনাথ বলেন, ‘১ মার্চ থেকে মশক নিধনে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। নিয়মিত ৩৩ ওয়ার্ডে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের ওষুধ ছিঁটানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ও বংশবিস্তারসহ ডেঙ্গুর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছি। এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তিনটি টিম গঠন করা হয়েছে। টিমগুলো আজ থেকেই বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার উৎপত্তিস্থল, লার্ভা ধ্বংস করার কাজ শুরু করেছে। যদি কারও বাসায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এছাড়া মশা নিধনে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মশা নিধনে ছিঁটানো ওষুধ কার্যকরী কি-না জানতে চাইলে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘যে ওষুধ ছিঁটানো হচ্ছে, তা শতভাগ কার্যকরী। এছাড়া ওষুধ ক্রয় করার আগে জেলা কিটতত্ত্ব বিভাগে নমুনা পরীক্ষা করার পর অনুমতি নিয়েই ওষুধ ক্রয় করা হয়।’