এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ’। নিজে সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রী হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। এ অবস্থায় মা’সহ পরিবারের লোকজন উন্নত চিকিৎসা করাতে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ফের নিজেদের বহন করা মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় কবলিত হলে ঘটনাস্থলে মারা যান মা। আহত হন ভাই,শাশুড়ি ও তিনিসহ আরো চারজন। একবার শুধু মায়ের লাশটা শেষবার দেখার পর ভর্তি হন পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে এলেও স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেননি। গত প্রায় দুই বছর ধরে পঙ্গুত্ব বরণ করে ভাঙা পা ও ও মাকে হারিয়ে ভাঙা মন নিয়ে জসিম এখন নিঃস্ব। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটার সাথে জীবনটাও চলছে সেভাবেই।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা ব্যক্তিটি হচ্ছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়া মহল্লার মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে জাকির হোসেন জসিম (৩৫)। সহায় সস্বলহীন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি ছিলেন মা সাহারা বেগম। তিনি আয়ার চাকুরি করতেন পৌর সদরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তাছাড়া প্রতিদিন একশ টাকার বিনিময়ে স্থানীয় ইমডো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ছেলে জসিম।
জসিম জানান, দিনটি ছিল ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসের ২০ তারিখ। রোগীর কিছু রিপোর্ট নিয়ে প্রতিদিনের মতো একটি সিএনজি চালিত যাত্রীবাহী অটোরিকশা যোগে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। পথে শম্বুগঞ্জ পার হতেই তাঁকে বহন করা অটোরিকশাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় ট্রাকের সাথে। এ সময় অটোতে থাকা পাঁচ যাত্রীর মধ্যে একজন ঘটনাস্থলে মারা যায় ও তিনিসহ আরো চারজন গুরুতর আহত হন। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দুই মাস চিকিৎসারপরও তাঁর ডান পা ক্ষতিগ্রস্থ ছাড়াও শরীরের উন্নতি হচ্ছিল না। এ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শে স্থানান্তর করা হয় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোরবর সকালে তাঁর মা সাহারা বেগম,শাশুড়ি রহিমা খাতুন,ভাই মাসুদ পারভেজ ও চাচাতো ভাই সৌরভকে সাথে নিয়ে একটি মাইক্রোবাস যোগে ঢাকার দিকে রওনা হন। পথে ভালুকার একটু আগে হঠাৎ মাইক্রোবাসের সামনের চাকা ফেটে গিয়ে উল্টো পাশের একটি খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই মা সাহারা বেগম মারা যান। সেই সাথে আহত হন অন্যরা। তখন পরিবারের কয়েকজন লাশ নিয়ে বাড়িতে যায়। অন্যরা আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে না নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফের ভর্তি করে। তখন কিছুটা জ্ঞান থাকায় মায়ের লাশটা শেষ বারের মতো দেখতে পাই। তখন মনে হয়েছিল এ জীবন থেকেই কি লাভ।
গতকাল রবিবার (১৪ মার্চ) জসিমের সাথে কথা হয়েছিল ঈশ্বরগঞ্জ সদরের ইমডো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে। তিনি আরো জানান,এখানে তিনি এখনো প্রতিদিন একশ টাকা করে মুজুরি পাচ্ছেন। নিজের চিকিৎসার পিছনে ব্যয় করা হয়েছে সকল সহায় সম্পদ। এখনো একা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না। একটি ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এরপরও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফুটমরমাইশ তাঁকেই করতে হচ্ছে।
মা সাহারা খাতুন স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়ার চাকুরি করতেন। তাঁর আয় দিয়ে কোনো মতে সংসার চলতো। এখন নিজের যা আয় হয় তার থেকেও বেশী খরচ হয় চিকিৎসার ব্যয় মিটাতে। ফলে নিজে পঙ্গুত্ব বরণ করে স্ত্রী সন্তান ও ভাইদের নিয়ে কোনো মতে জীবন চালাচ্ছেন। চিকিৎসার ব্যয় মিটাতে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে।