কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থানায় মোঃ সোলাইমান নামে ফেরারি আসামির হাতে হাতকড়ার বদলে ফুল তুলে দিয়েছেন ওসি মো. জাকির রব্বানী। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর বিকালে থানায় আত্মসমর্পণ করতে এলে অভূতপূর্ব এই ঘটনাটি ঘটে।
মিঠামইন থানার ওসি মো. জাকির রব্বানী জানান, মোঃ সোলাইমান মিঠামইন উপজেলার শরীফপুর গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে। নারায়ণগঞ্জের আদালতে তার বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা রয়েছে। এই মামলায় দুই বছরের মতো সময় ধরে তিনি পলাতক রয়েছেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মোঃ সোলাইমানকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ একাধিকবার তার বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ অবস্থায় শনিবার (১৩ মার্চ) বিকালে হঠাৎ করে মিঠামইন থানার ডিউটি অফিসারের কাছে হাজির হন। তিনি ডিউটি অফিসারকে জানান, তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তিনি ধরা দিতে এসেছেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মোঃ সোলাইমানের এমন কথাবার্তায় হতবাক হন ডিউটি অফিসার। তিনি মোঃ সোলাইমানকে নিয়ে যান থানার ওসি’র কক্ষে।
ওসি মোঃ জাকির রব্বানীরও কিছুটা অবিশ্বাস্য ঠেকে। তিনি সত্যিকার অর্থেই মোঃ সোলাইমান ওয়ারেন্টভুক্ত কি-না রেজিস্ট্রার খতিয়ে দেখতে বলেন। রেজিস্ট্রার দেখে জানা গেলো, সত্যিই মোঃ সোলাইমান ওয়ারেন্টভুক্ত একজন আসামি।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নিজে নিজে ধরা দিতে থানায় চলে আসায় মোঃ সোলাইমানকে সাধুবাদ জানান ওসি মোঃ জাকির রব্বানী। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, একজন অভিযুক্ত বা অপরাধী হিসাবে তিনি লোকটাকে পুরস্কৃত করবেন না আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি হিসেবে তাকে পুরস্কৃত করবেন। যেন তাকে অনুসরণ করে অন্যান্য পলাতক আসামিরা এভাবে থানায় এসে হাজির হন।
এ সিদ্ধান্ত থেকে ওসি মোঃ জাকির রব্বানী তার হাতে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া মোঃ সোলাইমানকে।
মোঃ সোলাইমান তখন জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি পলাতক রয়েছেন। থানা পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে গ্রেপ্তার করার জন্য, প্রায়শই পুলিশ বাড়িতে হানা দিচ্ছে। পলাতক জীবন মানেই অশান্তিময়। ফলে তার মনে শুভবুদ্ধির উদয় হয়। পুলিশ কে আর কষ্ট দিবে না। সিদ্ধান্ত নিলেন, পুলিশের হাতে ধরা দিবেন। তাই করলেন। নিজেই সশরীরে হাজির হলেন মিঠামইন থানায়।
মিঠামইন থানার ওসি মোঃ জাকির রব্বানী আরো জানান, থানায় এসে মোঃ সোলাইমানকে ডিউটি অফিসার কি জন্য এসেছেন জিজ্ঞেস করলে সোলাইমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। আমি ধরা দিতে এসেছি।
এ সময় ডিউটি অফিসার অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। আর ভাবতে শুরু করেন, ওয়ারেন্টভুক্ত একজন আসামিকে ধরতে কত কষ্ট করতে হয়। থাকে জীবনের ঝুঁকি। গ্রেপ্তার এড়াতে কত কৌশল অবলম্বন করে। পুলিশকে আক্রমণ করতে দ্বিধা করে না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে লোকটা চলে এসেছে থানায়। এরপরই ডিউটি অফিসার তাকে ওসি’র কাছে নিয়ে যান।
ওসি মোঃ জাকির রব্বানী বলেন, আমরা আহ্বান জানচ্ছি যারা পলাতক জীবন যাপনে রয়েছেন। আপনারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে থানা অথবা বিজ্ঞ আদালতে অতিসত্বর হাজির হন। আপনার বিরুদ্ধে যে মামলা থাকুক না কেন, তা আইনি মোকাবেলা করে নিষ্পত্তি করুন। বিচারিক কাজে সহযোগিতা করুন।