সুদের টাকা না দেওয়ায় বাড়ির সামনে ছেলেকে ধরে বেদম পেটাচ্ছে। চিৎকার শুনে বৃদ্ধা মা এগিয়ে গেলে তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয় হামলাকারীরা। আর এতে ওই নারী নিস্তেজ হয়ে গেলে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে ছেলেরা। কিন্তু নেওয়ার পথে পুনরায় হামলাকারীদের বাধার মুখে পড়ে তারা। এ সময় তাদের আক্রমণে ঘটনাস্থলেই মারা যান মা! আর আহত হন চার ছেলে।
এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দগাঁও গ্রামে। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) নিহতের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও নিহতের পরিবার জানায়, নিহত ওই বৃদ্ধা হচ্ছেন ওই গ্রামের আশরাফ আলীর স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৭০)। নিহতের ছেলে মো. মুর্শেদ আলী জানান, তিনি চামটা গ্রামের মো. শাহজাহানের কাছ থেকে সুদে পাঁচ হাজার টাকা ধার নেন। এ জন্য তাকে প্রতিদিন ৫ শ টাকা সুদ দিতে হতো। সুদ হিসাবে তিনি গত দুই মাসে অনেক টাকা শাহজাহানকে দিয়েছেন। এ অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যার ৭টার দিকে তিনি বাড়ির সামনে আবদুল কাইয়ুমের দোকানে বসে মুড়ি খাচ্ছিলেন। এ সময় শাহজাহানের লোকজন তাকে ডেকে সড়কে নিয়ে সুদে আসলে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন ফোন করে শাহজাহানকেও সেখানে ডেকে আনা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের কথাকাটাকাটি শুরু হয়। পরে শাহজাহান ও তার লোকজন তাকে একটি ইজিবাইকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তখন চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে তার মা আম্বিয়া খাতুন এসে লোকজনকে বাধা দেয়।
মুর্শেদ অভিযোগ করে জানান, মা যখন তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তখন শাহজাহানের লোকজন তার মাকে ধাক্কা মেরে সড়কে ফেলে দেয়। তার মা নিস্তেজ হয়ে পড়লে শাহজাহানের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে চলে গিয়ে চামটা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেয়।
নিহতের আরেক ছেলে আবুল কালাম জানান, মায়ের মাথায় পানি ঢালার পরও চেতনা ফেরেনি। তারপর তারা চার ভাই মিলে একটি ইজিবাইকে করে মাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হন। এ সময় সুদখোর শাহজাহানের লোকজন চামটা বাসস্ট্যান্ডে ইজিবাইক থামিয়ে তিনিসহ অপর তিন ভাই মোর্শেদ, মতি ও বাবুলকে মারধর শুরু করে। পরে লোকজনের সহায়তায় প্রতিরোধ ভেঙে রাত ৯টার দিকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, রোগী আগেই মারা গেছেন।
অভিযুক্ত শাহজাহান জানান, তার এক ভাই মোর্শেদকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা চাইতে গেলে ভাইকে মারধর করা হয়। এ সময় ধস্তাধস্তিতে ওই বৃদ্ধা মাটিতে পড়ে গিয়ে স্ট্রোক করেন। তিনি বলেন, তাকে কেউ মারেনি।
নান্দাইল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।