কিশোরগঞ্জে শিশুপুত্রকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় মা ছালমা বেগম (৩৫) কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৮ মার্চ) দুপুরে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম আসামির উপস্থিতিতে এই রায় দেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছালমা বেগম কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের প্যারাভাঙ্গা গুচ্ছগ্রামের আসাদ মিয়ার মেয়ে ও জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের টামনি আকন্দপাড়া গ্রামের মো. আবুল কালামের স্ত্রী।
মামলার বিবরণ ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৫ মার্চ ঘটনার ১৬/১৭ বছর আগে করিমগঞ্জের গুজাদিয়া ইউনিয়নের টামনি আকন্দপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল লতিফ মুন্সীর ছেলে মো. আবুল কালামের সঙ্গে ছালমা বেগমের বিয়ে হয়।
বিয়ের বছর দু’য়েক পর স্থানীয় ধাত্রীদের হাতে প্রথম সন্তান সুরাইয়া আক্তারের জন্মদানের সময় প্রসব জটিলতা থেকে ছালমা বেগমের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ঘটনার ৮/১০ দিন আগে ছালমা বেগম মেয়ে তাইয়েবা (৪) এবং ছেলে মাহাথির মোহাম্মদ (১৫ মাস) কে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে যায়।
২০১৬ সালের ৫ মার্চ সকালে নানাবাড়ি প্যারাভাঙ্গা গুচ্ছগ্রামে বুকের দুধের জন্য শিশু মাহাথির তার মায়ের কাছে গিয়ে বার বার বায়না ধরায় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে ছালমা। হাতের কাছে থাকা তরকারি কাটার দা দিয়ে গলা কেটে ঘটনাস্থলেই নিজ সন্তানকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় ওইদিনই হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটির বাবা মো. আবুল কালাম বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় স্ত্রীকে আসামি করে মামলা (নং-১০) করেন।
পরদিন ৬ মার্চ শিশুপুত্র মাহাথির মোহাম্মদকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সন্তান হন্তারক মা ছালমা বেগম।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মানসিক অসুস্থতার জন্যই ছালমা বেগম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে জানিয়ে আদালতের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।
পরবর্তীতে একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন মোল্লা আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
সাক্ষ্য-জেরা শেষে সোমবার (৮ মার্চ) দুপুরে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম আসামির উপস্থিতিতে মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট সৈয়দ শাহজাহান ও আসামি পক্ষে এডভোকেট মাজহারুল ইসলাম বাচ্চু মামলাটি পরিচালনা করেন।