হাওর ও চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘব ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২২ জুলাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। উদ্বোধনের ৩১ মাস অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ইনিস্টিউটটের অবকাঠামোগত কাজ, জনবল নিয়োগ এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান এখনও শুরু হয়নি।
অন্যদিকে ইনস্টিটিউটটির প্রথম প্রস্তাবনায় বাজেট ছিল ৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে নতুন প্রস্তাবনায় বাজেট ১০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এখনও পাস হয়নি বাজেট।
জানা যায়, হাওর ভূমিপুত্র খ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক ড. নিয়াজ পাশা ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি।
অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রপতির একান্ত ইচ্ছায় ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভিত্তিপ্রস্তর ফলকেই আটকে আছে অবকাঠামো। এ পর্যন্ত ৩ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান পরিচালক গত বছর জুলাই মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলা নিয়ে হাওর এলাকা গঠিত। এছাড়াও বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ চর। আর এসব হাওর ও চরে সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে কাটে মানুষের জীবন।
এসব অঞ্চলের মানুষের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে জীবনমান উন্নত করার প্রয়াসেই রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স সংলগ্ন জায়গায় ইনস্টিউটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
মূলত হাওরের গতিপ্রকৃতি, পরিবেশ ঠিক রেখে এবং ধ্বংস না করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোই এ ইনস্টিটিউটের মূল কাজ হবে। এছাড়াও এই ইনস্টিটিউটের অধীনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, ইনস্টিটিউটটির প্রথম প্রস্তাবনায় বাজেট ছিল ৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে নতুন প্রস্তাবনায় বাজেট ১০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল কেন্দ্র রেখে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়াতে ৬টি উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সেই প্রস্তাবনার উপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ইউজিসি ৬টি উপকেন্দ্রের জায়গায় ৪টি উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবনা দিয়ে কিছু সংশোধনী দেয়। করোনা ভাইরাসের কারণে সেই সংশোধনী দেওয়া সম্ভব হয়নি। নতুন সংশোধনী ইউজিসি কর্তৃক গৃহীত হলে বাজেট পাস করানো সম্ভব হবে। বাজেট পাস হলে অবকাঠামোগত কাজ শুরু করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, খুব শিগগিরই নতুন সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হবে। সাথে ইনস্টিটিউটটির জন্য উপকেন্দ্রসহ জায়গা নির্ধারণ ও নির্ধারিত জায়গা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একটা বাজেট চাওয়া হবে।
জনবল নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেটের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে জনবল নিয়োগের একটা খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই ইনস্টিটিউটের অধীনে ‘Wet Land Resources and Sustainable Agriculture’ নামে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হবে। আগের পরিচালকের সময়ে শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। খুব শিগগিরই নতুন করে আবারও বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবছরের অক্টোবর-মার্চ সেমিস্টার থেকে শুরু করার জন্য চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা ডিগ্রিটির পাঠ্যক্রমের (কারিকুলাম) খসড়া প্রস্তুত করেছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সেটি পাস করিয়ে সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করে চূড়ান্ত করা হবে।