চেক জালিয়াতি করে ৩৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফেরদৌস আজিজের বিরুদ্ধে। ১০৬টি চেক জালিয়াতির এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে ওই হিসাবরক্ষককে।
একই ঘটনায় সেসময় দায়িত্ব পালনকারী তিনজন ও বর্তমান এক উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ করেছে মহাপরিচালকের দপ্তর। তারা হলেন-মোহাম্মদ উল্লাহ পারভেজ (বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কর্মরত), জান্নাত আরা বেগম (বর্তমানে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কর্মরত), আজিজুল ইসলাম (বর্তমানে নরসিংদী সদরে কর্মরত) ও কটিয়াদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র দাস।
কটিয়াদী উপজেলার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের ওই হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১০৬টি চেকের মাধ্যমে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। উপজেলার অগ্রণী, কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে আদায়কৃত ঋণের জমানো টাকা চেকের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে এসব টাকা উত্তোলন করেন হিসাবরক্ষক। এ পরিস্থিতিতে বোর্ডের যুগ্ম পরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মহাপরিচালকের কার্যালয়। এ কমিটির তদন্তে হিসাব পরিচালনায় ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও চেক জালিয়াতির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।
এ ঘটনায় ১৫ ফেব্রুয়ারি পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক সুপ্রিম কুমার কুণ্ডু স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে হিসাবরক্ষক ফেরদৌস আজিজকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া চেকবই বাতিলের জন্য কটিয়াদী থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, প্রথমে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার একটি চেক জালিয়াতির অভিযোগ পেলে তিনি তদন্ত করে এর সত্যতা পান। এ ঘটনার পর তিনি বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি লিখে আরও এমন অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখার অনুমতি চান।
অভিযুক্ত ফেরদৌস আজিজের সঙ্গে কথা বললে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় খরচ দেখিয়ে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তারা চেকে সই নিয়ে টাকা উত্তোলন করে দিয়েছেন। তারা কীভাবে তা খরচ করেছেন, সে হিসাব তাকে দেননি।
কটিয়াদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র দাস জানান, তিনি চেক জালিয়াতির ব্যাপারে কিছুই জানেন না। হিসাবরক্ষকই তিনিসহ আরও অন্য কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর এমনকি ইউএনও’র স্বাক্ষর পর্যন্ত জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন। সুতরাং এসব অপকর্মের দায়ভারও সম্পূর্ণভাবে ওই হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফেরদৌস আজিজের।