জামালপুর শহরের মনিরাজপুর এলাকায় একটি নির্জন বাগানের মেহগনি গাছে ঝুলে থাকা এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সামিয়া (১৫) নামের ওই কিশোরী জামালপুর পৌরসভার পাথালিয়া গ্রামের সফুর আলীর মেয়ে। সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা ধর্ষণের পর তাকে গাছে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে থাকতে পারে বলে তার পরিবার ও পুলিশ ধারণা করছে।
নিহত সামিয়ার পরিবার সূত্র জানায়, জামালপুর শহরের পাথালিয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি সফুর আলীর চার মেয়ে এক ছেলে সন্তানের মধ্যে সামিয়া দ্বিতীয়। স্থানীয় হযরত শাহ জামাল (রহ.) উচ্চ বিদ্যালয়ে গত বছর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত সে। ছয়-সাত মাস আগে শহরের কাছারিপাড়া এলাকার এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের পর নিজ বাড়ি থেকে চলে যায় সামিয়া। পরবর্তীতে ওই ছেলে তাকে বিয়ে না করায় সামিয়া আর বাড়িতে ওঠেনি। হাসপাতালে পরিচয়ের সূত্র ধরে শহরের শাহপুর এলাকার সুজেতা বেগম নামের এক নারীকে ধর্ম মা বানিয়ে ওই বাড়িতেই থাকত সামিয়া।
সামিয়ার ধর্ম মা সুজেতা জানান, সামিয়া সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার বোনের বাড়ি শহরের চন্দ্রা দিঘিরপাড় এলাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু রাতে সে আর বাড়িতে ফিরে যায়নি।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার ভোরে শহরের মনিরাজপুর এলাকায় একটি বাগান থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পাথালিয়া থেকে সামিয়ার মা বাবা-মা ও অন্যান্য স্বজনরা এবং শহরের শাহপুর থেকে তার ধর্ম মা সুজেতা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটি সামিয়ার মরদেহ বলে শনাক্ত করেন। সামিয়ার গায়ে জিন্সের জ্যাকেট, জামা ও প্লাজো পায়জামা পরা ছিল।
মরদেহ উদ্ধারের সময় গলায় দাগ ছাড়া তার গায়ে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে মেহগনি গাছের সঙ্গে রশিটি বেশ কয়েকবার পেঁচানো অবস্থায় বাঁধা ছিল। এ ছাড়াও সেখান থেকে তার একটি মোবাইল ফোনসেট জব্দ করেছে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও তার পরিবারের স্বজনরা ধারণা করছেন। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সামিয়ার মরদেহে ধর্ষণের কোনো আলামত পায়নি।
সামিয়া ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি-না ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফলের পর জানা যাবে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মো. রেজাউল ইসলাম খান। দুপুরে জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে সামিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। একই সাথে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলামত হিসেবে সোয়াব সংগ্রহ করে তা শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম খান বলেন, কিশোরী সামিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি-না তা ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে। নির্জন স্থানে রাতের বেলা এভাবে একজন কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনা খুবই রহস্যজনক। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।