1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

দখলদারদের কবলে শেরপুরের গারো পাহাড়

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১

বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে ভারতঘেঁষা শেরপুর জেলায় রয়েছে বিস্তৃত বনভূমি। এই বনভূমির পুরোটাই বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের মধুটিলা, রাংটিয়া ও বালিজুড়ি রেঞ্জসহ জেলায় প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন বিভাগের এই বিশাল জমির শতকরা প্রায় ২০ শতাংশই এখন দখলদারদের হাতে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১২০ কোটি টাকা।

শেরপুরে প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে বনের জমি। দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের দোহাই দিয়ে জমি ছাড়ছেন না স্থানীয়রা। বন কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গেলে বাধা দেন দখলদাররা। এদিকে, উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বন সংরক্ষক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ে পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে চাষাবাদের জমি। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বাড়ি। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে গারো পাহাড়। প্রকাশ্যে বনের জমিতে বসবাসের কথা স্বীকার করলেও দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের দোহাই দিয়ে জমি ছাড়ছেন না দখলদাররা। তবে বিকল্প ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ করলে জায়গা ছাড়তে রাজি স্থানীয়রা।

বন বিভাগের তথ্যমতে, শেরপুর বন বিভাগের আওতায় রাংটিয়া রেঞ্জে ৮৮৮০ একর, মধুটিলা রেঞ্জে ৪২৩৫ একর এবং বালিজুড়ি রেঞ্জে ৭৫৮৫ একর বনভূমি রয়েছে। তিনটি রেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাংটিয়া রেঞ্জে ১৪৬৬ একর বনভূমি বেদখলে রয়েছে, যার বর্তমান মৌজাভিত্তিক বাজারমূল্য ৭৬ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার ৬২৭ টাকা। বালিজুড়ি রেঞ্জের আওতায় ৪৭৭.৩৪ একর, যার মূল্য ২০ কোটি ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ২৪৯ টাকা। মধুটিলা রেঞ্জের আওতায় ৬০২ একর বনভূমি বেদখলে রয়েছে। মৌজাভিত্তিক এর বাজারমূল্য ২২ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৫ টাকা।

বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে ও উচ্ছেদ করতে গেলে উল্টো বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই মামলা ও হামলা করেন দখলদাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, শেরপুর সীমান্তে অবৈধ দখলে থাকা বেশিরভাগ জমিই এখন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছে। যে কারণে উচ্ছেদ করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় হামলার শিকারও হতে হয় কর্মকর্তাদের।

এদিকে বন বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সীমান্তের বনভূমি দেখভাল ও রক্ষায় যে পরিমাণে জনবল থাকা প্রয়োজন, তা নেই। জনবল সংকটে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘসময় দখলে থাকা স্থানীয়রা বলছেন, অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা না করে দিলে তাদের পক্ষে কোথাও যাওয়া অসম্ভব।

বন বিভাগের তথ্যমতে, উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাধা দিয়ে গত ছয় মাসে কয়েকবার সংবাদ সম্মেলন, মিছিল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি, মানববন্ধন করেছেন দখলদাররা। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধনে এই কর্মকাণ্ডে অংশ নেন স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে এই সীমান্ত এলাকায় অবৈধভাবে বালু, পাথর উত্তোলনের চেষ্টা করেন কতিপয় ব্যবসায়ী। তাদেরকে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে বাধা প্রদানের চেষ্টা করি। তারা এসব কর্মকাণ্ডে ব্যর্থ হয়ে আমাদের বন বিভাগের শাল-গজারির কপিচ (চারা) কেটে বনের জায়গা দখলের চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে একাধিকবার মামলা করেও তাদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি।’

এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, ‘জবরদখকারীদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি মেনে ব্যবস্থা নিচ্ছি। দখলদার যেই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘পুনর্বাসনের মাধ্যমে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে। পাশাপাশি বন বিভাগের জমিগুলো যেন বেদখল না হয় সেদিকেও আমরা সচেষ্ট রয়েছি।’

রাংটিয়া এলাকার বাসিন্দা জিতার আলী। বর্তমান তার বয়স ১১৭। তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের আগে থাইকা আমরা এই জাগাত থাহি। আমরার পুলাপান নাই, নাতিও এহানেই থাহে। আমগোর আর কোনো জাগা জমি নাই। এইন থে আমগোরে উডাইয়া দিলে আমরার যাবার জাগা নাই।’

গজনী এলাকার কৃষক হেকমত আলী বলেন, ‘আমি বাপের কাছ থেকে এই জায়গা পাইছি। আমার বউ-পুলাপান লইয়া আমি এহন এই জাগাতি থাহি। এই গ্রামেই চাষাবাদ কইরা খাই। আমগোরে এইহান থেকে তুইলা দিলে আমগোর থাকার-খাওয়ার ব্যবস্থা কইরা তুইলা দিলে আমরা যাইতে পারমু। নইলে রাস্তায় থাহা ছাড়া আমগোর উপায় নাই।’

ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাঈম বলেন, ‘সীমান্তের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এখানে বাস করছেন। আমাদের সরকারপ্রধান যদি রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে পারেন, তাহলে আমরা এদেরকেও জায়গা দিতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেই তাদেরকে সরাতে হবে, এর আগে নয়। তাদের উচ্ছেদের কথা ভাবার আগে দ্রুত তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত।’

তবে নিয়মিত দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক প্রশান্ত কুমার সাহা।

তিনি বলেন, ‘এরপরও তাদের দমানো সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমরা দখলদারদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে। জবরদখলকারী যেই হোক না কেন, আমরা আমাদের বন বিভাগের জমি অবশ্যই অবৈধ দখলমুক্ত করব।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি