সরজমিনে নান্দাইল পৌরসভার আচারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১নং কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আচারগাঁও এলাকার বৃদ্ধা রহিমা খাতুন (৭০) ইভিএমে ভোট দেয়ার সবকটি ধাপ পেরিয়ে গোপনকক্ষে প্রবেশ করেন। তবে ১৫ মিনিট চলে গেলেও ভোট দিয়ে শেষ করতে পারছিলেন না। অবশেষে পোলিং অফিসার মাহবুব আলম নিজে বাধ্য হয়েই কক্ষের সব প্রার্থীর এজেন্ট নিয়ে গোপনকক্ষে ঢুকে রহিমাকে ভোট দিতে সাহায্য করেন।
এ বিষয়ে পোলিং অফিসার মাহবুব আলম বলেন, ‘রহিমা খাতুন গোপনকক্ষে গিয়ে ১৫ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করার পরও একটি ভোট দিয়ে বাকি ভোট দিতে না পারায় আমি সব এজেন্ট নিয়ে গোপনকক্ষে গিয়ে তার ভোট দেয়া সম্পন্ন করি। তবে তিনি যদি ভোট দিতে না পারতেন তাহলে এজেন্টদের পরামর্শে তার ভোট বাতিল করে দিতাম’।
একই কেন্দ্রের অন্য একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধ আব্দুল করিম ভোট দিতে এসে পড়েছেন বিপাকে। ইভিএমে কিভাবে ভোট দিতে হয় তা তিনি জানেন না। পরে তার ছেলে মাহাদিরকে নিয়ে গোপনকক্ষে গিয়ে ভোট দেন তিনি।
বৃদ্ধ আব্দুল কাদির বলেন, ‘নতুন যন্ত্রে কিভাবে ভোট দিতে হয় তা জানি না। পরে ছেলের সহায়তায় ভোট দিয়েছি’।
কক্ষের পোলিং অফিসার মামুন মিয়া বলেন, বৃদ্ধ আব্দুল কাদির ভোট দিতে পারছেন না। আবার ভোট না দিয়ে যাবেনও না। তাই সব প্রার্থীর এজেন্টদের সম্মতি নিয়ে তার ছেলেকে নিয়ে ভোট দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
নান্দাইল পৌরসভার ৭নং আচারগাঁও ওয়াডের মৃত ফজলুর রহমানের স্ত্রী বৃদ্ধা সঙ্গীতা বলেন, ‘কি মেশিনে ভোট দিতে আসছি। তিনবার চেষ্টা করেও আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়েই চলে আসছি। সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে আবার ৩টার সময় যেতে বলেছে’।
একই কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য মো. বজলুর রহমান লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের দেখিয়ে দিচ্ছেন কিভাবে ভোট দিতে হয়।
আনসার সদস্য মো. বজলুর রহমান বলেন, ‘স্যার আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন- ইভিএমে কিভাবে ভোট দিতে হয়। তা দেখিয়ে দিতে সবাইকে’।
এ বিষয়ে আচারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. মশিউর রহমান বলেন, যেহেতু নান্দাইল পৌরসভায় প্রথমবারের ইভিএমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। তাই ভোট দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তরুণরা স্বচ্ছন্দে ভোট দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় র্যাব, পুলিশ, বিজিপি, আনসার, মোবাইল কোর্ট ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা রয়েছেন। সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি রয়েছে।
নান্দাইল পৌরসভার নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এখন পর্যন্ত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশা করছি কোনো সমস্যা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
এই পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীসহ সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৫২ জন। পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ১২টি ভোট কেন্দ্রের ৭১টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।