বিদেশ ফেরতের টাকায় ঘর বেঁধে স্বামীর সাথে সুখের সংসার করতে চেয়েছিলেন লাকী (২৮)। এই ঘরই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘর না ছাড়ায় মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রতিপক্ষের অমানবিক নির্যাতন ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়ে তিনি এখন নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লাকি আক্তার নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার দেউলীবাজার এলাকার অটোরিকশা চালক মাহাবুবের (৩২) স্ত্রী। লাকি আক্তার মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে হামলার শিকার হন। হাসপাতলের বিছানায় চিকিৎসাধীন থেকে তিনি মুঠোফোনে বলেন, রাত সাড়ে আটটার দিকে আমার শাশুড়ী-ননদ ও দেবরগণ মিলে আমাকে মারধর করে। খবর পেয়ে স্বামী বাড়ীতে এসে প্রতিবাদ করলে তাকেও বেঁধে রেখে আমাকে কোপায়। আমার স্বামীকেও হত্যার হুমকী দেয়। আমাদের কেউ নাই। আমি সকলের সাহায্য চাই।
লাকির স্বামী মাহাবুব মিয়া বলেন, লাকি বিদেশে থাকতো। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর তার ও আমার টাকা মিলিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করি। আমি ঋণ করে টাকা যোগাড় করে ভালোই চলছিলাম। লাকি তার টাকা-পয়সা দিয়ে আমার মা, ভাই-বোন সকলকেই যতটুকু পারে সাহায্য করেছে। ঘর নির্মাণের পর লাকির টাকা শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকেই তার উপর আমার মা, ভাই-বোনেরা অত্যাচার শুরু করে। এই সব সহ্য করতে না পেরে আমরা বাড়ি থেকে বারহাট্টায় চলে যাই।
তিনি আরও বলেন, গোপালপুর এলাকার মুজিবুরের বাসায় ভাড়ায় বসবাস করতে থাকি। কিছুদিন আগে আমার ভাইয়েরা মায়ের অসুখের কথা বলে আমাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যায়। শুরু হয় আবারও নির্যাতন। সবাই আমাদেরকে বলে যে, ঘরটা দিয়ে দে। আমরা ঘর ছাড়তে নারাজ। আমাদের চার মাসের একটা শিশু আছে। ঘর ছাড়লে কোথায় যাব? এ ব্যাপারে বুধবার সকালে থানায় দরখাস্ত করেছি। মা একটা মামলাবাজ। আশপাশের অনেকের নামেই তিনি মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেছেন। সবাই তাকে ভয় পায়।
মাহাবুব আরও জানায়, তার স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল। আমার মামলায় কেউ স্বাক্ষী দেয় নাই। আমার স্ত্রীর শরীরে মারধরের চিহ্ন আছে। মাথায় ও কপালে দা’য়ের কোপের দাগ আছে। এইসবতো আর এমনি এমনি হয় নাই। কি করবো আমি ? আমি সকলের সাহায্য চাই।
বারহাট্টার ধলাপাড়া গ্রামের অটোরিকশা চালক আব্দুল আউয়াল বলেন, মাহাবুবের সব কথাই সত্য। সমস্যাটা আমি জানি। মাঝে মাঝে তার বাড়িতে গিয়ে মিটমাটের চেষ্ঠা করেছি। তার ভাই-বোন, মা খুবই অত্যাচারী। মিটমাটের কথা বলায় তারা আমাকেও মারধোর করেছে। তাদের ভয়ে এখন আর যাই না।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায় নাই। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক রয়েছেন।
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বুধবার রাতে বলেন, মাহাবুবকে একটা দরখাস্ত দিতে বলেছিলাম। দিয়েছে কি-না খোঁজ নিয়ে দেখছি। আমি বাইরে ছিলাম।