1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

ময়মনসিংহে রেণু পোনায় লাখপতি

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

মাছের জন্য বিখ্যাত ময়মনসিংহ। মাছ উৎপাদনে জেলার প্রতি উপজেলায় বেসরকারি এবং ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা মৎস্য খামারে মাছ চাষ করে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধন করেছে। অনেকেই বলছেন মাছ চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে এখানে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ৭নং চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের কিশোরগঞ্জ ময়মনসিংহ সড়কের দুই পাশে পোনা তৈরি করার জন্য অসংখ্য হ্যাচারি গড়ে উঠেছে।

এর মধ্যে তৈয়ব আলীর ‘ভাই ভাই ফিশসীড প্লান্ট’ দেশের শ্রেষ্ঠ রেণু পোনা উৎপাদনে ১৯৯৭ ও ২০১৯ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বর্ণ পদক পেয়েছে। তৈয়ব আলী ১৯৮৯ সালে ভাই ভাই ফিশসীড প্লান্ট গড়ে তোলেন। মানসম্মত পোনা উৎপাদনে এটি জেলা এমনকি দেশের মধ্যে বিখ্যাত। তৈয়ব আলী মারা যাওয়ার পর তার তিন ছেলেই মাছ চাষে জড়িত। তবে ভাই ভাই ফিশসীড দেখাশোনা করছেন মো. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু ও মো. মোজাম্মেল হক।

জানা যায়, কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ভাই ভাই ফিশসীড প্ল্যান্ট তৈরি করে রেণু পোনা উৎপাদন শুরু করেন তৈয়ব আলী। পরে তিনি মারা যাওয়ার পর বাবার ব্যবসা ধরে রাখেন মো. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু ও মো. মোজাম্মেল হক।

মো. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, হ্যাচারি এমন এক ধরনের জলাশয়, যেখানে মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়। হ্যাচারিতে প্রজননক্ষম মাছ রাখার পুকুর থাকে এবং সেখান থেকে প্রজননক্ষম মাছগুলোকে ডিম ছাড়া, ডিম ফুটানো, শুক ও শুকোত্তর পোনা লালনের ব্যবস্থা থাকে।

এছাড়া হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনার জন্য আশপাশে চাহিদা থাকতে হবে। হ্যাচারি নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনী উপকরণাদি ও মাছের খাদ্য সরবরাহ সুনিশ্চিত এবং পরিবেশ দুষণমুক্ত হলেই কেবল হ্যাচারি নির্মাণ করা যেতে পারে।

মানসম্মত পোনা উৎপাদনে প্রথম শর্ত হলো উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা। সেই স্থানের মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকাসহ পুকুরে সারা বছর পানি থাকে, পানি সরবরাহ বা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে, পানির গুণাগুণ মৎস্য চাষের উপযোগী ও যাতায়াতের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বছরের ৮ মাস শুক ও শুকোত্তর পোনা উৎপাদন করা যায়। বাকি চারমাস শীতের কারণে পোনার উৎপাদন করা যায় না। শীত কিছুটা কমে এলে ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রেণু উৎপাদন করা যায়। বাকি চার মাস রেণু উৎপাদন বন্ধ থাকে।

বিভিন্ন পুকুর থেকে ডিমওয়ালা মাছ প্রথমে সংরক্ষণ করে সপ্তাহের প্রথম দিন শনিবার বিকেলে দুই ঘণ্টা পানির হাউসে বিশ্রামে রাখার পর সন্ধ্যা ৬টায় প্রথম হরমোন ইনজেকশন দেয়া হয়। পরে রাত ১২টায় দ্বিতীয় ডোজ হরমোন ইনজেকশন দেয়া হয়। পরে রোববার ভোর ৬টায় ডিম সংগ্রহ করা হয়।

তিনি বলেন, মাছের ডিম সংরক্ষণ করার পর বোতলে ৭২ ঘণ্টা ডিমগুলো পানির মধ্যে প্রস্ফুটিত হয় এবং ডিমপোনাগুলো চৌবাচ্চার মধ্যে সঞ্চিত হয়। পরে সেখান থেকে হাউসে ৪ ঘণ্টা রাখার পর শুক ও শুকোত্তর পোনা তৈরি হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে ২৫০ গ্রাম রেণু পোনা ৬ কেজি পানি দিয়ে পলিথিনে অক্সিজেন দিয়ে বিক্রি করা হয়।

রেণু পোনা উৎপাদনের পর কেমন দামে বিক্রি হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেক মাছের রেণু পোনার দাম একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন সিলভার মাছের রেণু পোনা ৩ হাজার টাকা কেজি, কার্প মাছের রেণু পোনা ২ হাজার টাকা কেজি, গ্লাসকার্প মাছের রেণু পোনা ৪ হাজার টাকা কেজি, রাজপুঁটি মাছের রেণু ১৫শ টাকা কেজি, রুই মাছের রেণু পোনা ৩ হাজার টাকা কেজি, কাতল মাছের রেণু পোনা ৪ হাজার টাকা কেজি ও মৃগেল মাছের রেণু পোনা ৩ হাজার টাকা কেজি।

তবে পাঙ্গাস মাছের রেণু পোনা বোতল হিসেবে বিক্রি করা হয়। প্রতি বোতল ৫ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। এছাড়া শিং মাছের রেণু পোনা ৪ হাজার টাকা কেজি, মাগুর মাছের রেণু পোনা ১৪ হাজার টাকা কেজি, পাবদা মাছের রেণু পোনা ৬ হাজার টাকা কেজি, গুলশা মাছের রেণু পোনা ১২ হাজার টাকা কেজি টাকা ধরে বিক্রি করা হয়।

প্রতি সপ্তাহে হ্যাচারিতে কী পরিমাণ রেণু পোনা উৎপাদন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সাথে ২৫০ কেজি উৎপাদন করা সম্ভব হয়। তবে এ সপ্তাহে একশ কেজির মতো উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ৮ মাসে প্রায় ৪ হাজার কেজি রেণু পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

যাবতীয় খরচ বাদে গড়ে প্রতি কেজি রেনু পোনাতে কত টাকা লাভ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি কেজি রেনু পোনাতে ৫ শত টাকা লাভ হয়। সে হিসাবে ৮ মাসে ৪ হাজার কেজি রেণু পোনা বিক্রি করে ২০ লাখ আয় করতে পারেন।

খাদ্যের দাম ও হরমোন ইনজেকশনের দাম বেড়ে যাওয়ায় যাওয়ায় আগের চাইতে লাভ কিছুটা কমে গেছে। তবে বাবার ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য এখনো ব্যবসা করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিস অনার্স অ্যান্ড ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্য শেক্সপিয়ার মাহমুদ ওয়াকিল বলেন, আমি একজন হ্যাচারি ব্যবসায়ী। আমাদের কমিটির কাজ হলো তৈরি রেণু পোনার মান নির্ধারণ করা। কেউ যদি কোনো অনিয়ম করে তাকে আমাদের কমিটি থেকে বাতিল করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি