সাদা কাপড়ে মোড়ানো প্যান্ডেল। সুসজ্জিত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদের চত্বর। চতুর্দিকে ভিন্ন এক আমেজ। কিশোরগঞ্জ ও তার পার্শ্ববর্তী ছয়টি জেলা থেকে এসেছেন কোরআন প্রেমিরা। প্রতি বছরেই এখানে জড়ো হন কোরআন প্রেমিরা।
কোরআনের আলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে কিশোরগঞ্জে হুফফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বিভাগীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান এবং ক্বেরাত মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশগ্রহণ করেন কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও শেরপুর জেলার বিভিন্ন মাদরাসার প্রতিযোগিরা।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদ চত্বরে বিভাগীয় এ হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান এবং ক্বেরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার হিসেবে ওমরাহ নিজের করে নেন নেত্রকোনা জামালুল কোরআন মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ ক্বারী আব্দুল হালিম সালমানের ছাত্র হাফেজ মুহাম্মাদ জাকারিয়া।
এছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ের যথাক্রমে সিগারুল হুফফাজ ও দশ, বিশ, ত্রিশ পারা গ্রুপের প্রত্যেক প্রতিযোগীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
এর কিছুদিন আগে কিশোরগঞ্জের জেলা পর্যায়ে আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে যথাক্রমে সিগারুল হুফফাজ ও পাঁচ, দশ, বিশ, ত্রিশ পারা গ্রুপের যারা বিজয়ী হয়েছিলেন তাদেরকেও এই অনুষ্ঠানে লক্ষাধিক টাকার পুরস্কার প্রদান করা হয়।
জেলা পর্যায়ের ত্রিশ পারা গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেন আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল। বিজয়ী ফয়সাল কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ নিউ আদর্শ নূরানী হাফিজিয়া মাদরাসা অধ্যয়নরত।
অনুষ্ঠানে আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ-এর প্রিন্সিপাল, আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, আজ আমি যেখানে বসে কথা বলছি সেখানে বসতেন আমার বড় ভাই আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ.। আজ তিনি নেই। তিনি ছিলেন কোরআন পাগল বুড়ো। তিনি প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকতেন। মঞ্চে বসে উপভোগ করতেন কোরআনের পবিত্র সুর।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন যখন বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস প্রভাব বিস্তার করে তখন পুরো দেশ একটি অজানা আতংকে পড়ে যায়। মৃতদের লাশের কাছে কেউ যেতে চায় না। ঠিক সে সময় কিছু আত্মত্যাগী ছেলেরা এগিয়ে আসলে প্রতিষ্ঠিত হয় আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন করোনার প্রভাবে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। আলহামদুলিল্লাহ এ বছরের এই হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজনও করেছে।
উপস্থিতিদের লক্ষ্য করে তিনি আরও বলেন, এক এক করে আমরা মুরুব্বি হারা হচ্ছি। দুই হাজার একুশ সালে আমরা অনেক আলেমদের হারিয়েছি। আমরা এই কোরআনের মজমা থেকে তাদের নাজাতের জন্য দোয়া করি। আমরা এক সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। আমরা সব বিভেদ ভুলে ঐক্য নিয়ে কাজ করতে চাই।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান এবং ক্বেরাত সম্মেলনে পুরষ্কার বিতরণ করেন আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ-এর প্রিন্সিপাল, আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশিদ, হুফফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান উস্তাদুল হুফফাজ হাফেজ ক্বারী আব্দুল হক, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মুহাদ্দিস, হুফফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি, আল্লামা আনোয়ার শাহ রহ. ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ।
এতে আমন্ত্রিত মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্বারী, হুফফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর সহকারী শিক্ষা সম্পাদক হাফেজ ক্বারি নাজমুল হাসান, হুফফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হাফেজ নাসীর উদ্দিন, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা ইমদাদুল্লাহ (তলোলি), আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা লুৎফর রহমান, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মুহাদ্দিস ও উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগের তত্বাবধায়ক মুফতি সুহাইল আহমাদ, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার সহকারী মুফতি রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
এছাড়া হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা উবায়দুল্লাহ, মাওলানা আবু তৈয়ব, মাওলানা আঞ্জার শাহ তানিম, মাওলানা এরশাদুল্লাহসহ কিশোরগঞ্জের কয়েক শতাধিক উলামা ও বিপুল সংখ্যক ছাত্র উপস্থিত ছিলেন৷