নেত্রকোনায় হাওরে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজে গঠিত ১৬১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মধ্যে ৯৯টির কাজ শুরু হয়েছে। আর ৬২টি প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এতে ওই অঞ্চলের কৃষকেরা বন্যা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। তাঁরা বলছেন, বাঁধের কাজ দ্রুত শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারলে অকালবন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নীতিমালা সূত্রে জানা যায়, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে জরিপকাজ, প্রাক্কলন ও পিআইসি গঠন করতে হবে। আর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করে তা ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে হবে। কিন্তু এখনো ৬২টি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত মুঠোফোনে বলেন, এবার হাওরে পানি দেরিতে নামায় জরিপকাজ শেষ করতে সময় লেগেছে। আর গঠিত ১৬১টি পিআইসির মধ্যে ৯৯টির কাজ শুরু হয়েছে। সার্বিক কাজের অগ্রগতি প্রায় ৩৫ শতাংশ। বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ দু-এক দিনের মধ্যেই শুরু করে ভেকু মেশিনের সাহায্যে মাটি কাটার কাজ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করা হবে।
জেলা পাউবো, প্রশাসন ও হাওর অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন ও কলমাকান্দা উপজেলায় আংশিক এলাকা মূলত হাওরাঞ্চল। হাওরের একমাত্র ফসল বোরো। এই ফসলের ওপরই নির্ভর করে কৃষকদের সারা বছরের সংসার খরচ, চিকিৎসা, সন্তানদের পড়ালেখা ও আচার–অনুষ্ঠান। জেলায় ছোট–বড় মোট ১৩৪টি হাওর আছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরীতে আছে ৮৯টি হাওর। হাওরাঞ্চলে ৩১০ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ। বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের ৫০ হাজার হেক্টরের বেশি জমির বোরো ফসলের আবাদ নির্ভর করে। এবার জেলায় ১৬১টি পিআইসির গঠন করা হয়। এর মধ্যে কলমাকান্দায় ৯টি, বারহাট্টায় ৩টি, আটপাড়ায় ১টি, মদনে ২৪টি, মোহনগঞ্জে ১৮টি ও খালিয়াজুরীতে ১০৬টি পিআইসি আছে। ওই পিআইসিগুলোর আওতায় ১৪৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধে মাটি কাটার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো বারহাট্টায় ১টি, মদনে ১২টি, মোহনগঞ্জে ৫টি, খালিয়াজুরীতে ৪৪টিসহ মোট ৬২টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী, কাজের মেয়াদ বাকি আর মাত্র ১৯ দিন। অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। বাঁধগুলো মেরামতের জন্য এ বছর পাউবো প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়।
সব প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন। খালিয়াজুরীর বল্লভপুর গ্রামের কৃষক হেলাল মিয়া বলেন, এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় তাঁরা চিন্তিত। বাঁধের কাজ দ্রুত শুরু করে দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে আগাম বন্যা হলে বোরো ধান হুমকির মুখে পড়বে।
জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণেই এখনো সব পিআইসির কাজ শুরু হয়নি। দ্রুত কাজ শুরু করে এ মাসেই শেষ করে দেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম, মোহনগঞ্জের ইউএনও আরিফুজ্জামান ও মদনের ইউএনও বুলবুল আহমেদ জানান, দু–এক দিনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করে ভেকু মেশিনের সাহায্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।