প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত শেরপুর পৌরবাসী। চতুর্থ ধাপের পৌর নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠ সরগরম হলেও প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি দেড়শ বছরের এই পৌরসভায়।
পৌরবাসীর অভিযোগ, ভোটের সময় প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি থাকলেও, জয়ের পর সবই ভুলে যান তারা। নিয়মিত কর পরিশোধ করেও মেলে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।
ভোটাররা বলছেন, নাগরিকসুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন যারা, তাদেরকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবেন তারা।
এদিকে শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ও শহরের প্রবেশমুখেই দেখা যায় ময়লার ভাগাড়! এ যেন দুর্গন্ধে নাক চেপে শেরপুরকে স্বাগত জানানো। শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী আমনকুড়া বিল ভরাট করে পৌরসভার এই ময়লার ভাগাড়ের কারণে বেশ ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। যে বিল দিয়ে শহরের বর্জ্য ও বর্ষাকালের পানি প্রবাহিত হতো, তা এখন ভরাট হয়ে গেছে পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ের কারণে। দীর্ঘদিনের দাবির মুখে টিনের ঘের দিয়ে আবারও এখানেই ফেলা হচ্ছে ময়লা। এতে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পার্শ্ববর্তী হকার্স মার্কেটসহ আশপাশের মানুষ।
এছাড়া বৃষ্টি এলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পানি বের হওয়ার উপায় নেই শহরের ড্রেন দিয়ে। এটা শেরপুর পৌরবাসীর নিত্য নৈমিত্তিক দুর্ভোগ।
ব্যবসায়ী মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘একটানা দেড় ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই সজবরখিলা, কলেজ মোড়, তেরাবাজারসহ বিভিন্ন রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। শহর থেকে পানি বের হওয়ার যে ড্রেন তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।’
সজবরখিলা এলাকার মুসা মিয়া বলেন, ‘শুধু বর্ষার সময় না, স্বাভাবিক দিনেও যদি দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হয়, তাহলেও বাসাবাড়িতে পানি উঠে যায়। এটা আমাদের জন্য বড় সমস্যা।’
এছাড়াও স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত ও অপরিচ্ছন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ময়লার স্তূপ ও জমে থাকা পানির কারণে বংশ বিস্তার করছে এডিস মশা।
স্থানীয় মিস্টার আলী বলেন, ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে একেবারেই উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ। নাগপাড়া এলাকা দিয়ে শহরের যে ড্রেন বেরিয়ে গেছে, তা বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। এতে ড্রেনে ময়লার স্তূপ হয়ে জমে থাকা পানিতেই মশার জন্ম হয়।
গৃহিনী আকলিমা বেগম বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় বিকেল থেকেই কয়েল জ্বালাতে হয়, নইলে সন্ধ্যার পর ঘরে ঢোকাই যায় না।’
যানজট শেরপুর শহরের সবচেয়ে ভয়াবহ নাগরিক দুর্ভোগ। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ইজিবাইকের নিবন্ধন দেয়ায় শহরে বেড়েছে যানজট। যানজটের ভোগান্তি এড়াতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই পৌরসভার। এছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, ফুটপাত দখল করে দোকান ও নির্মাণ সামগ্রী রাখার কারণে পথচারী চলাচলেও ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে দেড়শ বছরের এ পৌরসভায় এখনো সম্পন্ন হয়নি নিজস্ব বাস টার্মিনালের কাজ।
সবশেষ নানা সীমাবদ্ধতা, সমস্যা আর সম্ভাবনার সঙ্গে আবার এসেছে পৌর নির্বাচন। শেরপুর পৌরসভার এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, কাউন্সিলর ৪৯ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ১৮ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে এবারও ভোটারদের দরজায় প্রার্থীরা। তারা শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা বর্তমান মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেন, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে পৌর বাস টার্মিনাল এবং প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হচ্ছে আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন। এসব কাজ সম্পন্ন হলে শেরপুরবাসীর সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে।
এদিকে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন এবিএম মামুনুর রশিদ পলাশ। স্বতন্ত্র প্রার্থী জগ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া রফিকুল ইসলাম আধার ও চামচ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আরিফ রেজাসহ আরও তিনজন প্রার্থী।
বিএনপির প্রার্থী এবিএম মামুনুর রশিদ পলাশ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা চাই। মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে আমিই জয়ী হব।’
অন্যদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শানিয়াজ্জামান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন।’