কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ৮০০ বছরের পুরোনো ‘কুড়িখাই’ মেলা শুরু হয়েছে। আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ সামছুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বুখারীর (রহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী এ মেলায় রকমারি পণ্যের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে বড় মাছের সমাহার।
এ এলাকার রীতি অনুযায়ী, মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যেতে হয় জামাইদের। ভিন্নধর্মী এ মেলা সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে চলবে রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত। মেলার শেষ দিন থাকছে বউমেলা। যেদিন মেলার পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকে নারীদের কাছে।
জানা গেছে, ৯০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই এলাকায় আস্তানা স্থাপন গড়েন আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ সামছুদ্দীন আওলিয়া সুলতানুল বুখারী (রহ.)। তার মৃত্যুর পর সেখানে গড়ে ওঠে একটি মাজার। ১২২৫ সাল থেকে মাজারের বার্ষিক ওরস ঘিরে প্রতি বছর কুড়িখাই মেলার আয়োজন করে মাজার কমিটি।
মেলায় বাহারি খেলনা, বাতাসা, জিলেপি, মুড়ি-মুড়কি, প্রসাধনী, কাঠের আসবাবপত্র, হাঁড়ি-পাতিলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই পাওয়া যায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লাখো দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখর হয় মেলা প্রাঙ্গণ। নাগরদোলা, সার্কাস, পুতুলনাচসহ নানা বিনোদনে ভিড় ছেলে-বুড়ো সবার। প্রিয়জনকে নিয়ে মুড়ি-মুড়কি, প্রসাধনীসহ বাহারি সওদা কেনার ধুম পড়ে মেলায়। বড়দের হাত ধরে আসে শিশুরা।
রীতি অনুযায়ী মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুড়বাড়ি নিয়ে যান জামাইরা। মনকাড়া মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাতের কাছে পছন্দের মাছটি পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। বোয়াল, রুই, কাতলা, চিতল নানা প্রজাতির বড় মাছ নিয়ে মেলায় এসেছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা।
এদিকে মেলায় আসা বাউল-সাধকদের আধ্যাত্মিক সুরের মূর্ছনায় সৃষ্টি করে এক ভিন্ন আবহ। মেলার সার্বিক নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের এমপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এ মেলায় আসি। এটি আমাদের কাছে ঈদের দিনের মতো। আগমী বছর থেকে মেলার পরিধি আরও বাড়ানো হবে।’
মাজার ও মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুজ্জামান অনপু জানান, ‘এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও মেলায় কোনো ছন্দপতন ঘটেনি। বরং লোকসমাগম আরও বেড়েছে। প্রতিদিন লাখো মানুষের সমাগম ঘটছে। প্রাণের টানে সারাদেশ থেকে মানুষ মেলায় আসছে। তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’