কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের একই সেলে আটক থাকার সময় হাজতী সাইদুর মিয়া (৩৬) কাঠ দিয়ে আঘাত করে ঘুমন্ত হাজতী আব্দুল হাই (২৭) কে নিহত এবং হাজতী মোঃ জাহাঙ্গীর (২৮) কে গুরুতর জখমের ঘটনায় মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার-১ এর জেলার নাশির আহমেদ বাদী হয়ে সাইদুর মিয়াকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি (নং-১৪) দায়ের করেন।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ আবু বকর সিদ্দিক পিপিএম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমানকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জেলের অভ্যন্তরে খুন হওয়া আব্দুল হাই সদর উপজেলার রশিদাবাদ শিমুলিয়া গ্রামের ইসরাইল মিয়ার ছেলে। নেশা করে পিতামাতাকে মারপিট ও তাদের খুন করতে উদ্যত হওয়ায় পিতা ইসরাইল মিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৫ জানুয়ারি আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। পরদিন ৬ জানুয়ারি তাকে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫১ ধারায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এরপর থেকে সে হাজতী হিসেবে জেলা কারাগারে আটক ছিল।
এছাড়া আহত মোঃ জাহাঙ্গীর জেলার নিকলী উপজেলার রুদার পোড্ডা নয়াহাটি গ্রামের শাহজাহানের ছেলে। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নিকলী থানায় দায়ের করা একটি মাদক মামলায় সে গ্রেফতার হয়ে হাজতী হিসেবে কারাগারে আটক রয়েছে।
অন্যদিকে জেলার তাড়াইল উপজেলার কালনা মাইজপাড়ার ইসমাইল মিয়ার ছেলে ঘাতক সাইদুর মিয়া ২০১৭ সালের ৫ জুলাই ভৈরব থানায় মুক্তিপণের দাবিতে শিশু অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর ৭ জুলাই থেকে সে জেলা কারাগারে হাজতী হিসেবে আটক রয়েছে।
এদিকে কারাগারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে আইজি প্রিজন ও জেলা প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আইজি প্রিজন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিআইজি প্রিজন মোঃ তৌহিদুল ইসলামকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, নেত্রকোনার জেল সুপার আব্দুল কুদ্দুস ও মানিকগঞ্জের জেল সুপার বিকাশ রঞ্জন।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ মিজানুর রহমান ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। দুটি তদন্ত কমিটিই মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার-১ এর সেল এলাকার ১১নং কক্ষে সাইদুর মিয়ার সাথে আরো পাঁচ আসামি আব্দুল হাই, মোঃ জাহাঙ্গীর, সদরের চৌদ্দশত নোয়াপাড়ার মুমিন (৩০), নিকলীর পশ্চিম টেংগুরিয়ার তকদির মিয়া ও জেলা শহরের চর শোলাকিয়া ঈদগাহ রোডের সাকিব চৌধুরী (২৮) আটক আছে।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত ৩টা ৫৫মিনিটে ঘাতক সাইদুর মিয়া বাথরুমের দরজার কাঠ ভেঙ্গে সে কাঠ দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় হাজতী আব্দুল হাই এর মাথায় এবং অপর হাজতী মোঃ জাহাঙ্গীরের মাথায় ও বাম চোখের উপরের অংশে এলোপাথাড়ি আঘাত করলে গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়।
পরে ভোর সাড়ে ৪টায় দুজনকেই কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাজতী আব্দুল হাইকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর হাজতী মোঃ জাহাঙ্গীরকে চিকিৎসা শেষে জেলা কারাগার-১ আনা হয়। বর্তমানে সে কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।