“পাগলিটাও মা হয়েছে, তবে বাবা হয়নি কেউ; পাগলি বলে যায়নি ছেড়ে প্রসব ব্যথার ঢেউ” জনপ্রিয় একটি কবিতার কয়েকটি চরণের করুণ বাস্তবায়ন হয়েছে ময়মনসিংহে। গত ৩০ জানুয়ারি সকালে জেলার ত্রিশাল উপজেলায় মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগলি) এক নারী জন্ম দেন পিতৃ-পরিচয়হীন ছেলে সন্তান।
নারীটি এবারই যে প্রথম সন্তান জন্ম দিলেন তা কিন্তু নয়। ভাসমান অবস্থায় জীবনযাপন করা মানসিক ভারসাম্যহীন মধ্যবয়সী এ নারীর মারিয়া নামে আরও একটি কন্যা শিশু রয়েছে। নিজেকে সে পরিচয় দেয় জনন নামে।
যে বা যারা মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এমন নেক্কারজনক কাজ করছে তার প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন সচেতন মহল। পাশাপাশি তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এর আগে, এই পাগলি মাকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর ওই নারীর খোঁজ নিতে এসেছিলেন ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর ওই নারীসহ তার শিশু মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল উপজেলা পরিষদে। নিয়ম অনুযায়ী মা-মেয়েকে আলাদা রাখতে হবে বলে ওই নারীকে জানানোর পর কোনভাবেই তার শিশু মারিয়াকে ছাড়া থাকতে রাজি করানো সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, এই অসহায় মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও তার মেয়ের পাশে এগিয়ে আসেনি কোন জনপ্রতিনিধি। দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় কিছু মানবিক মানুষ। তারা এই পাগলির জন্য সপ্তাহখানেক আগে শীত নিবারণের জন্য প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে খুপরি ঘরও করে দিয়েছেন। আর তাই রাতে শীত থেকে কিছুটা রক্ষা পেয়েছে শিশু মেয়েসহ ওই নারী।
দীর্ঘদিন যাবত রাশিয়ায় বসবাস করা আবু জাকারিয়া নিশাত বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসহায় এই নারীর খবরটি ছড়িয়ে পড়লে আমি জানতে পারি। তখন সত্যিকার অর্থে মনের ভেতর কষ্ট লেগেছে। হয়ত কারো কাছে এই নারী ভোগবিলাসের পণ্য হয়েছে, এরমধ্যে এত শীতের মাঝে কষ্ট করছে। আর তাই একটু সহানুভূতির হাত বাড়াতে তার জন্য শীতের গরম কাপড় পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অসহায় মানুষগুলোর প্রতি জনপ্রতিনিধিদের কি কোন দায় নেই! সরকার এতো এতো কম্বল দিল, এরমধ্যে একটিও কি এই পাগলী ও তার শিশু পাওয়ার উপযুক্ত ছিল না, প্রশ্ন রাখেন রিশাত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কয়েকমাস যাবত ওই নারী উপজেলা জুড়ে ঘোরাফেরা করছে। এছাড়া অলহরী ঘাটপাড় বাজারে তাকে বেশ কিছুদিন থাকতে দেখছে স্থানীয়রা। দিনে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরাফেরার পর যেখানে রাত হয় সেখানেই শিশু মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। এখন জন্ম নেওয়া শিশু বাচ্চাকে নিয়ে যেখানে সেখানে হাঁটাচলা করছে ভারসাম্যহীন জনন। ওই নারীর পরিবারের খোঁজ নেওয়াসহ তার জন্য একটু সহানুভূতির হাত বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।