শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূর ওপর তাঁর স্বামী অমানুষিক নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে আজ সোমবার সকালে তাঁর স্বামীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর নাম রোকসানা বেগম (৩৫)। অভিযুক্ত স্বামীর নাম বাবুল মিয়া (৪০)। তিনি উপজেলার কাকরকান্দি গ্রামের মৃত আহাম্মদ আলীর ছেলে। বাবুল কাকরকান্দি বাজারের নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে রয়েছেন।
পুলিশ ও গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে বাবুল মিয়ার সঙ্গে সোহাগপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের মেয়ে রোকসানার বিয়ে হয়। তাঁদের তিন ছেলে রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে বাবুল যৌতুকের জন্য তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতেন। পাঁচ বছর আগে বাবুল তাঁর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বেদম মারধর করেন। ওই সময় রোকসানার বাম হাত ভেঙে যায়। তখন ছয় মাস চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন। নির্যাতনের কারণে তাঁর স্ত্রীর তৃতীয় ছেলে রোহান শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। যৌতুকের জন্য রোকসানা বাবার বাড়ি থেকে প্রায়ই টাকা নিয়ে তাঁর স্বামীকে দিতেন। গত শনিবার সকালে দেড় লাখ টাকা যৌতুকের জন্য বাবুল তাঁর স্ত্রীকে বেদম মারধর করে ঘরে বন্দী করে রাখেন।
দুপুরে খবর পেয়ে রোকসানার বাবা ইসমাইল হোসেন ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরাফত মিয়ার সহায়তায় রোকসানাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে যান। বিকেলে রোকসানাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মাথাসহ সারা শরীরে আঘাত থাকায় রোকসানা এখনো যন্ত্রণায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এদিকে শনিবার রাতে হাসপাতাল থেকে রোকসানার ছোট ভাই মুকুল মিয়া ও তাঁর মামাতো ভাই আবদুল হালিম বাড়ি ফেরার পথে কাকরকান্দি বাজারে ৭-৮ জনকে নিয়ে বাবুল মিয়া তাঁদের পথ রোধ করেন। হাসপাতালে ভর্তি কেন করা হলো, এ কথা বলেই মুকুল ও হালিমকে মারধর করেন তাঁরা। এ সময় দৌড়ে কোনোমতে রক্ষা পান মুকুল ও হালিম। আজ সকালে রোকসানা থানায় গিয়ে তাঁর স্বামী বাবুল মিয়া, দেবর আনোয়ার হোসেন, শাশুড়ির বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন।
নির্যাতনের শিকার রোকসানা বলেন, ‘এভাবে যৌতুকের টাকার জন্য প্রতিনিয়ত আমাকে অমানুষিক মারধর করা হতো। আমাদের তিন সন্তান রয়েছে। তাদের কথা ভেবে সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছি। এখন আর পারছি না। তাই নিরুপায় হয়ে মামলা করেছি। আমি এর বিচার চাই।’
কাকরকান্দি ইউপি সদস্য আমির হোসেন বলেন, ‘আমরা সবাই মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলাম। সারা শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এলাকাবাসী জানায় যৌতুকের জন্য প্রায়ই ওই গৃহবধূকে মারধর করা হতো। এভাবে একজন স্বামী স্ত্রীকে মারতে পারেন, না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।’
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বলেন, ওই নারী থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।