মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দেশে আছে, থাকবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তি যুদ্ধের চেতনার উপর আঘাত জনগণ মেনে নেবেনা। যে ষড়যন্ত্রকারী ও কুচক্রীরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে তাদের কালো হাত গুড়িয়ে দেওয়া হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে’।
তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের উপর আঘাত হেনেছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে হলেও শাস্তি দিতে হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা আজ সোমবার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভবেরচর বাস স্ট্যান্ডে ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর সম্মুখ যুদ্ধের শহিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত “বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে’’ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে শহিদদের স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা ৭ ডিসেম্বর সম্মুখ যুদ্ধের ঘটনা ও স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভবেরচর ও দাউদকান্দি এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা গজারিয়ার পৈক্ষারপাড় গ্রামে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন থেকেই আমার (প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা) ছোট ভাই মতিউর মুক্তিযোদ্ধাদের সান্নিধ্যে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। আগেই খবর ছিল, পাক আর্মিরা ভবেরচর ও আশেপাশের গ্রামে হামলা চালাবে। তখন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মতিউরসহ আরো অনেকে খাবার ও ফলের ঝুঁড়িতে বোমা নিয়ে ভবেরচর ঈদগাহ ব্রিজ উড়িয়ে দিতে আসে। এরপর পাক আর্মির সাথে সম্মুখ যুদ্ধে এই মহাসড়কে ১২ জন কিশোর শহিদ হয়। তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেবে ও শহিদদের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন পিপিএম, যুদ্ধকালীন থানা কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক, গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তালেব ভূইয়া ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুন নাহার শিল্পী। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন গজারিয়া উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃত্ববৃন্দগণ।
স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, গজারিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, শহিদ পরিবার, স্থানীয় আওয়ামীলীগবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
যুদ্ধকালীন থানা কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক বলেন, জনগণের উৎসাহে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। মুন্সিগঞ্জে অনেক যুদ্ধ হয়েছে তবে ভবেরচরের এই যুদ্ধে আমাদের সহযোদ্ধারা শহীদ হয়। তাদের জন্য গজারিয়াবাসী গর্বিত। অনুষ্ঠান শেষে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর গজারিয়ার ভবেরচর ঈদগাহ ব্রিজ সম্মুখ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ১২ জন শহিদ হন। শহিদদের নাম, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান জাহাঙ্গীর (১৩), শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: ইদ্রিস আলী সরকার (১৮), শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আ: আউয়াল (১৩), শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন (গোগা)(১৪), শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজালাল মৃধা (১৩), শহিদবীর মুক্তিযোদ্ধা শুভাস চন্দ্র মালী (১৫), শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন (১৪), শহিদবীর মুক্তিযোদ্ধা মো: ইসমাইল সরকার (৩৬), শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হরিপদ চক্রবর্তী (২০), শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (১৬), শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ বেপারী (১৪) ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়মোহন চক্রবর্তী(৫০)।