নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৭ জন। অন্যদিকে শুধু নভেম্বর ও ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৬ জন। অর্থাৎ ধারণা করা যায়, চলতি মাসের শেষে দুই মাসের ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে তার আগের ১০ মাসকেও। গত ২৪ ঘণ্টায় (৪-৫ ডিসেম্বর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ জন। তার মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ২০ জন আর রাজধানীর বাইরে দু’জন। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৬ জন। অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ৯ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আজ (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ২৫৩ জন আর চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ১৭১ জন।
কন্ট্রোল রুম জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫, মার্চে ২৭, এপ্রিলে ২৫, মে মাসে ১০, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩, আগস্টে ৬৮, সেপ্টেম্বরে ৪৭, অক্টোবরে ১৬৩, নভেম্বরে ৫৪৭ আর ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ জন। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৭ জন আর নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৬ জন। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন মারা গেছেন গত আগস্টে আর দুইজন মারা গেছেন অক্টোবরে।
প্রথম ১০ মাসের তুলনায় শেষ দুই মাসে ডেঙ্গু রোগী বেশি হবার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডেঙ্গুর পিক টাইম ধরা হয় জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরকে। এ তিন মাসে করোনা নিয়েই ফোকাস হয়েছে বেশি। ফলে ডেঙ্গু আড়ালেই ছিল। আর ডেঙ্গু টেস্টও খুব বেশি করা হয়েছে বলে মনে হয় না। দুই মাসে রোগী বেড়েছে, কারণ গত দুই মাসে হাসপাতাল থেকে রিপোর্টও হচ্ছে বেশি।’ আরেক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরে ‘লেট বৃষ্টিপাত’ হয়েছে, যার কারণে নভেম্বরে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে।স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)-এর পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরে ডেঙ্গুতে কিছু রোগী তালিকাভুক্ত না-ও হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়। করোনার দিকেই ফোকাস ছিল বেশি। তারপরও বছরের শুরু থেকেই অধিদফতর কাজ করেছে, ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, চলতি বছরে ডেঙ্গুর দিকে ‘অ্যাটেনশন’ কম ছিল। যার কারণে শুরুর দিকে ডেঙ্গু কিছুটা মিসিং হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ‘এর মাঝে আগে বৃষ্টি হওয়ায় মশার সংখ্যা বেড়েছে। ডেঙ্গুও বেড়েছে। তাই এখন ডেঙ্গুর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। শীত এসেছে। এতে আবার ডেঙ্গু কমতেও পারে।’ বললেন অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ।