ভাসানচর পৌঁছেছে রোহিঙ্গাদের প্রথম দল। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে তারা ৭টি জাহাজে করে ভাসানচরে পৌঁছায়।
এর আগে, কক্সবাজারের উখিয়া থেকে নিয়ে আসা ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ৭টি জাহাজ । নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের বহন করা জাহাজগুলো শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়।
অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, দুপুর দুইটার দিকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজগুলো। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পতেঙ্গা এলাকার বোট ক্লাব ঘাট, কোস্টগার্ড ঘাট ও রেডি রেসপন্স বার্থে রাখা জাহাজে রোহিঙ্গাদের তোলা হয়।
এর আগে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিতে এসব রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। ২০টি বাসে করে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।
ভাসানচর যেতে আসা এসব রোহিঙ্গাকে বৃহস্পতিবার রাতে রাখা হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী রেডি রেসপন্স বার্থ ও বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে অস্থায়ী ‘ট্রান্সজিট ক্যাম্পে’।
নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, ভাসানচরে আসা সকল রোহিঙ্গাদের প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর ওয়ার হাউজে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ব্রিফিং করবে। ব্রিফিং শেষে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত রাখা ৭, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ক্লাস্টারে তাদেরকে রাখা হবে।
সূত্র মতে জানা যায়, আগামী প্রায় এক সপ্তাহ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাদেরকে রান্না করে খাওয়ানো হবে। ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে ৮১০ জন, পুরুষ ৩৬৮ জন, নারী ৪৬৪ জন। এছাড়া ২২টি এনজিও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে ভাসানচরে অবস্থান করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যায়ক্রমে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা নেয়া হবে সেখানে। রোহিঙ্গাদের এই দলটি থাকবে ভাসানচরের অত্যাধুনিক আবাসন প্রকল্পে। এরই মধ্যে ভাসানচরে মজুদ করা হয়েছে তিন মাসের খাদ্যপণ্য। প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করবে বেসরকারি সংস্থাগুলো। এজন্য ২২টি এনজিওর প্রতিনিধিরা কাজ শুরু করেছে ভাসানচরে।
সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারপারসন জেসমিন প্রেমা জানান, শুধু আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার কাজ করছে সরকার এবং ২২টি উন্নয়ন সংস্থা। এসব রোহিঙ্গাকে জাহাজে ওঠার আগে বিভিন্ন ডাটা এন্ট্রি সাপেক্ষে বরাদ্দকৃত আশ্রয়ণের টোকেন ও চাবি হস্তান্তর করা হয়। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে।
সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে যেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৬০ শরণার্থী বসবাস করতে পারেন সে লক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০টি।
তিনি বলেন, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এর আগে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে দেখার জন্য ভাসান চরে পাঠানো হয়। তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসান চরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে জানান তিনি।