ভাসানচরে কাউকে জোর করে নেয়া হচ্ছে না। যারা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন, তাদেরই কেবল স্থানান্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার ভাসানচরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে একথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে গেলে এনজিওগুলোর লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে এ ভয়ে অনেকেই যাচ্ছে না। অনেকে মনে করে তাদের সুযোগ সুবিধাও কমে যাবে। আসলে এমন কিছুই না, ভাসানচরে আরও অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে হয়েছে তাদের জন্য। যারা যাচ্ছে সেখানে, আমি কাউকেই জোর করে নিয়ে যাচ্ছি না। যারা যাচ্ছেন স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন। এ সময় জাতিসংঘকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্বচ্ছ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, আজ সকালে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। প্রথম দফায় উখিয়া ক্যাম্প থেকে ১০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে বহনকারী ১০টি বাস ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। তবে, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে উখিয়া ক্যাম্প থেকে তাদের চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে আগামীকাল তাদের ভাসানচর নেয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, প্রথম দফায় প্রায় ৬শ’ পরিবারকে স্থানান্তর করা হবে। ভাসানচরে যেতে আগ্রহীদের কক্সবাজার থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে বাসে করে চট্টগ্রাম আনা হবে। সেখান থেকে নৌ বাহিনীর জাহাজে ভাসানচর যাবেন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা।
স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামীকাল ভাসানচরে যাচ্ছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্য দিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প হিসেবে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ভাসানচরের। স্বেচ্ছায় স্থানান্তরে রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নিয়ে যেতে প্রস্তুত নৌবাহিনীর ১২টি ও সেনাবাহিনীর ১টি জাহাজ। এরইমধ্যে ভাসানচরে মজুদ রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী।
ভাসানচরে প্রথম ধাপে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখা হবে ৫ থেকে ১১ নম্বর ক্লাস্টারে। তিন মাসের মজুদ সক্ষমতার খাদ্য গুদামে প্রস্তুত ৬৬ টন খাদ্যপণ্য। তবে প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করবে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার।
ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পে ১৪৪০টি ঘর এবং ১২০টি সাইক্লোন সেন্টারে থাকতে পারবেন ১ লাখ ১ হজার ৩৬০ জন রোহিঙ্গা। নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়েছেন। পাচ্ছেন খাদ্য, চিকিৎসা। এমনকি শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের এদেশে সাময়িক অবস্থান যেন আরো শোভন হয়, সে চেষ্টার কমতি করেনি সরকার। তাই তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ভাসানচরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আশ্রয়ন প্রকল্প।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের জীবন যাপন নির্বিঘ্ন করতে আগেই ভাসানচরে পৌঁছেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় আড়াইশ সদস্য এবং ২২ এনজিওর কর্মকর্তারা। প্রথম দলের বসবাস শুরুর পর, কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা মিয়ানমারের বাকি নাগরিকরাও ভাসানচরে আসতে আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার সরকারে অব্যাহত দমন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। সে থেকেই তারা বাংলাদেশে সরকারের আশ্রয়ে রয়েছে।