নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরির বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের ভূমিকা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই নিয়ে আপাতত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না দিলেও মাঠে রয়েছেন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোর কোনো কর্মসূচি আসতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা। রাজধানীর ধোলাইপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরিকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছিল।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর চ্যালেঞ্জ। অন্য কোনো পথ ও ইস্যু না পেয়ে ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এই সব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আহ্বান জানাবো, তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পরিকল্পনা থেকে যেন সরে আসে। না হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।’
মো. আব্দুর রহমান আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন না থামে, তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ভাস্কর্যের বিরোধিতায় নেমেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে। ভাস্কর্যকে যারা মূর্তি বলে অপপ্রচারে নেমেছে, তারা নিজেরাই ভ্রান্তিতে আছে। দেশের আলেম সমাজ ও বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই বারবার বলেছেন, মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়।’
বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের বিরোধিতার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এখনো কর্মসূচি না দিলেও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কর্মসূচি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রলীগও। মানববন্ধন, প্রতিবাদ কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচি থেকে তারা ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের কঠোর হুঁশিয়ার দেন। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান তারা।
জানতে চাইলে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ বলেন, ‘মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির কোথা থেকে টাকা আসছে, তাদের এজেন্ডা কী, এসব ব্যাপারে প্রশাসনিক তদন্ত হওয়া উচিত। প্রশাসনিক তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের মদদ-দাতাদের চিহ্নিত করতে হবে। এই দেশের মাটিতেই তাদের শাস্তি দিতে হবে। তাদের একেবারে নির্মূল করে দিতে হবে। তারা যেন বারবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য সভ্যতার ধারা বিবরণী। ৭১-এর পরাজিত অপশক্তি, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের খুনিচক্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিএনপি-জামাতের মদদপুষ্ট ধর্ম ব্যবসায়ী ফতোয়াবাজদের রুখে দিতে প্রস্তুত স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদের প্রতিহত করা হবে।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইরানে, ইরাকে, মিশরে বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য আছে। সরকার স্বাধীনতার মহানায়কের ভাস্কর্য করবে, তার বিরুদ্ধে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।’
ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিতে পারবে না। জাতির পিতার ভাস্কর্যকে ইস্যু করে দেশবিরোধী কুচক্রী মহল পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই অপশক্তি ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করছে।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িকতার বীজ এই দেশে ছড়িয়ে দিতে চায়, তারা দেশদ্রোহী বলে বিবেচিত হবে। ভুলে গেলে চলবে না, এদেশে দেশদ্রোহীদের ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়েছে।’ ভাস্কর্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।