সিভিএম থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর ফর ভালনারেবিলিটি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন গতকাল জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠিগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের লক্ষ্যে সামগ্রিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি একটি বড় ধরনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমরা যদি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জীবনযাত্রার দিকে লক্ষ্য করি, তবে দেখতে পাই যে কিভাবে তারা জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক সংকটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। কি উপায়ে তারা টিকে আছে আমরা সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সাহায্য করতে পারি।’
বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমিটি অন নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার্স অ্যান্ড অটিজম-এর চেয়ারপার্সন সায়মা লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন আয়োজিত ‘সিভিএফ-সিওপি ২৬ ডায়লগ: মিটিং দ্য সার্ভাইভাল, ডেডলাইন টুওয়ার্র্ডস ম্যাক্সিমাল রেসিলিয়েন্স’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিরূপ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো এই মানুষগুলোর জীবনযাত্রার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে অধিকাংশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো তাদের সবটুকু সামর্থ দিয়ে টিকে আছে। আমাদের এই সব মানুষেরা কিভাবে টিকে থাকতে পারে সেদিকে দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ।’
তিনি আরো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলার সময় আমরা তাপমাত্রা হ্রাস ও গ্রিন হাউস গ্যাস ও যেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর উপর জোর দেই। আমাদের নিজ দেশের মানুষের ঝুঁকিপূর্ণতার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে আমরা ওই সব মানুষের কথা ভুলে যাই।’
সায়মা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অবকাঠামো ধ্বংস হয়। এছাড়াও জীবন, জীবিকা ও মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং ইকো-সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যায় এবং এই সবকিছুর প্রভাবে পড়ে সেই সব মানুষের উপর যারা অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকন্তু তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে, তাদের অক্ষমতা ও স্বাস্থ্যগত কারণে তাদের অবস্থা আরো বিপন্ন হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারির কারণে আমরা এই সব বৈশ্বিক সংকটের ভয়াবহতা সম্পর্কে যখন অবগত হচ্ছি, তখন এ বিষয়টি ভালভাবে উপলব্ধি করে সামনে এগুনোর একটি সুযোগ। উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে ‘যতক্ষণ না সবদিক বিবেচনা করে সামগ্রিকভাবে সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে না পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন ইস্যুই আলাদা নয়।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং আমি মনে করি আলাপ-আলোচনার করে আমরা প্রচুর সময় নষ্ট করি। স্বাস্থ্য বলতে আমি শারিরীক ও মানসিক উভয়কেই মনে করি। অধিকন্তু আমরা অক্ষমতার বিষয়টিকে প্রায়ই ভুলে যাই। এটি আমাদের মাথায় থাকে না শারিরীক অক্ষমতা ছাড়াও অনেক মানুষ মানসিকভাবেও প্রতিবন্ধকতার শিকার। তাদেরকে কিছু বোঝানো খুবই কঠিন।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশ নেন।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ)-এর সকল সদস্য আলোচনায় যোগ দিয়ে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় কোপ-২৬ সম্পর্কে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশ ব্যক্ত করেন। এদের সকলেই লন্ডনে বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূত।
যুক্তরাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগর, পরিবেশ ও কোপ ২৬ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড জ্যাক গোল্ডস্মিথ অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অর্নার হিসেবে যোগ দেন। গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রফেসর ড. প্যাট্রিক ভার্কুইজেন এবং সিভিএফ এক্সপার্ট অ্যাডভাইসরি গ্রুপ এর চেয়ারম্যান এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর পরিচালক প্রফেসর ড. সলিমুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্টি’র বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ সিভিএফ এর উপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। লন্ডনে বাংলাদেশী হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম ভার্চুয়াল আলোচনা সভাটির সঞ্চালনা করেন। সায়মা বলেন, সিভিএফ-সিওপি ২৬ জলবায়ু আলোচনার এখনই উপযুক্ত সময়।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ততের মানবিক অধিকার তুলে ধরতে সিভিএফ’র এর আহ্বানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে আমাদের সিওপি২৬-সিভিএফ অংশীদারিত্ব প্রয়োজন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২০ এ সপ্তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। তিনি বলেন, ‘২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর আমাদের ১ শতাংশ জিডিপি হ্রাস পাবে। এছাড়াও সমুদ্রের পানির বর্ধিত স্তর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১৭ শতাংশ নিমজ্জিত হয়ে যাবে। এর ফলে ২ কোটি লোক গৃহহীন হয়ে পড়বে। আমরা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি। এর ফলে আমাদের প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য নেতৃত্বে অভিযোজন ও উপশম উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এ বছর বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়তার অংশ হিসেবে দেশব্যাপী ১ কোটি গাছ লাগানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ‘মুজিব প্লানেটারি প্রোসপারিটি ডিকেড’ ঘোষণা ও একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিকে আরো জলবায়ু বান্ধন করেছে।
অলম বলেন, ‘আমাদের পার্লামেন্ট ‘প্লানেটারি ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করে বিশ্বের প্রতি জলবায়ু পরির্বনের ঠেকাতে ‘এই যুদ্ধে অংশ নিতে’ বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো এ বছর ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতিত্ব লাভ করেছে। আমরা এমন একটি সময় এই দায়িত্ব পেয়েছি যখন সিভিএফ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো কোভিড-১৯ মহামারি ও জলবায়ু সংকটে রয়েছে।- বাসস