নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জামিল উদ্দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সোহরোওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ ও ফুটবল খেলা মধ্যবয়সী এই মানুষটির নিয়মিত রুটিনের অংশ। গত কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বর, ঠাণ্ডা-কাশিতে ভুগছিলেন। সাধারণ অসুস্থতা মনে করে প্রথমে চার-পাঁচদিন ঘরে বসেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। টানা জ্বর থাকায় স্ত্রীর অনুরোধে কোভিড-১৯ টেস্ট করতে দেন জামিল। নমুনার আইডিতে ভুল হওয়ায় রিপোর্ট হাতে পাননি। সপ্তাহ শেষে সকালে ঘুম ভেঙে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে দেরি না করে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান তিনি।
সেখানে গিয়ে দেখা গেল, অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গেছে ৮৩-তে। প্রথমে ৫ লিটার, ১০লিটার ও শেষে ১৫ লিটার অক্সিজেন নেয়ার পরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০-এর ওপরে উঠলেও কিছুক্ষণ পর পর আবার নিচে নেমে যাচ্ছিল।
নিকটাত্মীয়দের ডেকে চিকিৎসকরা জানান, রোগীকে আইসিইউতে নিয়ে হাইফ্লোনজেল যন্ত্রপাতিতে অক্সিজেন দিতে হবে। আইসিইউতে নেয়ার পর হাইফ্লোনজেলে ৪৫-৫০লিটারেও যখন অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক হচ্ছিল না তখন চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখলেন, ফুসফুসে উল্লেখযোগ্য সংক্রমণ হয়েছে। এরপর চিকিৎসকরা স্বজনদের ডেকে বন্ড সই নিয়ে জানান, যেকোনো সময় রোগীর অবস্থার অবনতি হতে পারে।
গত তিনদিন ধরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন জামিলউদ্দিন। তিনদিনে সব মিলিয়ে সোয়া দুই লাখ টাকা বিল এসেছে।
তার স্ত্রী বলেন, ‘জীবনের চেয়ে টাকার মূল্যে বেশি না। তাই টাকা গেলেও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে চাই।’
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী করোনা সংক্রমণকে সাধারণ রোগ মনে করে হেলাফেলা করায় এখন মাশুল গুণতে হচ্ছে। এমন ভুল যেন কেউ না করে।’
করোনার লক্ষণ দেখা দিলেই নমুনা পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শুধু জামিলউদ্দিনই নন, তার মতো আরও অনেকেই করোনাকে অবহেলা করে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছেন বলে হাসপাতালগুলো ঘুরে জানা গেছে। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ববিদদের পরামর্শ অনুযায়ী বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা, দুই মিটার দুরত্ব বজায় রেখে চলা এবং উপসর্গ দেখে করোনায় আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসা কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলে ঝুঁকি কমে।
কিন্তু মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোতে উপচেপড়া ভীড়, গায়ে গা ঘেঁষে মানুষ চলাফেরা করছে। গণপরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এদিকে, ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) চলছে। আগের চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশেও নমুনা পরীক্ষা, রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। তবে রোগী সুস্থতার হারও বেশ আশাব্যঞ্জক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ২৯ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬ হাজার ৬০৯ জনে।
এই সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৭৮৮ জন। দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪০৭ জনে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২৮৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ জন।
এদিকে, দেশের মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি দশ লাখে শনাক্ত হচ্ছেন ২ হাজার ৭১৫ দশমিক ১৫ জন, সুস্থতার হার ২ হাজার ২২০ দশমিক ৫৪ জন এবং মৃত্যুর হার ৩৮ দশমিক ৮১।