ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার রায় প্রকাশের এক বছর পূর্ণ হলো আজ ২৪ অক্টোবর । গত বছরের এ দিনে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ বহুল আলোচিত এ মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। তবে বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। এখন তা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে দীর্ঘ এক বছরেও রায় কার্যকর না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নুসরাতের স্বজনরা।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখনও পুলিশ ওই বাড়িতে পাহারা বসিয়ে নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছেন। বাড়িতে এখনও চাঞ্চল্য ফেরেনি। এখনও নুসরাতের বাবা, মা ও দুই ভাই তার স্মৃতিরোমন্থন করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।
মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। রায় দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে। ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধীদের জন্য এটি হবে একটি নিদর্শন। রায়ের এক বছর পরও সাজা কার্যকর না হওয়া অপ্রত্যাশিত।’
জরুরিভিত্তিতে উচ্চ আদালতের আপিল শুনানি শেষে দ্রুত সাজা কার্যকরের দাবি নুসরাতের বড় ভাইয়ের।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে থানায় করা শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টার ভবনের ছাদে ডেকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা করেন তার সহপাঠীরা। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনাটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় তোলে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন আন্দোলনকারীরা। নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু জানান, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছেছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি আরও জানান, বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটির শুনানি হবে।
এদিকে নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় করা মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের ৮ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে সাইবার ট্রাইব্যুনাল।