জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টে খালাস পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে আর বাধা নেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। আগামী নির্বাচন যখনই হোক, তাতে প্রার্থী হতে পারবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালে ঢাকার জজ আদালত চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিলেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার খালেদা জিয়া এবং সাজাপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম খানকে খালাস দেন।
গত ১১ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের দুটি সাজাই মওকুফ করেছিলেন। এতে তিনি কারামুক্ত হলেও আইনি লড়াইয়ে সাজামুক্ত হতে আপিল করেন।
সংবিধান অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজা হলে, মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল হয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই মামলার একটিতে সাজা স্থগিত, অন্যটিতে খালাস পাওয়া খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নিতে আর বাধা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা থাকলেও সেগুলোতে সাজা হয়নি। গতকাল তিনি কয়লা খনি মামলা থেকেও অব্যাহতি পেয়েছেন।
চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, কোনো সাক্ষী বলেননি খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলটি করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খালাসের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
খালাস পাওয়া অন্য দুই ব্যক্তি হলেন প্রয়াত হারিস চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
বড়পুকুরিয়া মামলায় অব্যাহতি
১৭ বছর আগে দায়ের করা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা থেকে গতকাল খালেদা জিয়াসহ তিনজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবু তাহের। অপর চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন। অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান ও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিচার চলবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনকে আসামি করা হয়েছিল।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ স্বার্থ হাসিলের জন্য মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে আমাদের।
২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা করে দুদক। একই বছরের ৫ অক্টোবর ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
দুই মামলায় তারেক রহমানকে অব্যাহতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়ের করা কর ফাঁকি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের চাঁদাবাজির আলাদা দুই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক রেজাউল করিম ও ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সানাউল্ল্যাহ আলাদাভাবে অব্যাহতির আদেশ দেন।
কর ফাঁকির মামলায় নথি পর্যবেক্ষণ করে বাদীর অভিযোগকে কাল্পনিক ও সৃজন আখ্যা দেন বিচারক। এক-এগারো সরকারের সময় ২৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই ঢাকার কর অঞ্চল-৬-এর উপ-করকমিশনার সামিয়া আক্তার বাদী হয়ে এই মামলা করেন।
এক-এগারোর সময় ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে তারেক রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। যদিও পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক চাপে বাদী মামলা করেছিলেন।