১০০ হোটেল, ৩ হাজার দোকান… ভারতের কলকাতায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত এসব দোকান ও হোটেল মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। তবে গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশিরা যেতে না পারায় এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা অন্তত ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এই হোটেল ও মার্কেটগুলোর কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। সঙ্গে খাঁ খাঁ করছে এগুলো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া রোববার (১০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে তুলে এনেছে সেখানকার পরিস্থিতি।
সংবাদমাধ্যমটিকে কলকাতা হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোতোষ সরকার বলেছেন, “জুলাই থেকে মার্কুইস স্ট্রিটে আমার হোটেলের ৩০ রুমের মাত্র চার থেকে পাঁচটিতে বাংলাদেশিরা থাকছে। কিন্তু ছাত্র আন্দোলন ও শেখ হাসিনাকে হটানোর আগে ২৬ থেকে ২৮ রুমে বাংলাদেশি অতিথিরা থাকত।”
যেসব হোটেলে ১০ থেকে ১২টি রুম আছে সেগুলো অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ তাদের মাত্র এক বা দুটি রুম বুক হচ্ছে। মনোতোষ সরকার বলেন, “২০২১ সালে করোনার সময় ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকার সময় যে অবস্থা হয়েছিল। এখন ঠিক একই পরিস্থিতি চলছে।”
চট্টগ্রামের রাজন বিশ্বাস, এমনই একটি খালি হোটেলে থাকছেন। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, আগে যখন তিনি কলকাতায় যেতেন তখন বাংলাদেশি পর্যটকে হোটেলগুলো গম গম করত। কিন্তু ভারত সরকার বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজন বলেছেন, “আমার আগেই ভিসা ছিল। তাই কলকাতায় এসেছি। কিন্তু যারা এখন ভিসার জন্য আবেদন করছেন, যদি এটি জরুরি মেডিকেল ভিসা না হয়, তাহলে তাদের ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। খুব সম্ভবত বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ভারত চিন্তিত। এ কারণে ভিসা ইস্যুতে তারা কঠোর হয়ে গেছে।” রাজন জানিয়েছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বর্তমান ভিসাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এখন যে ১০-১৫ শতাংশ মানুষ ভারতে যাচ্ছেন সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে।
কলকাতার নিউমার্কেটে বাংলাদেশি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা দেখা যায়। কলকাতার স্থানীয় মানুষের চেয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরাই এখানে বেশি আসেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশিরা না থাকায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা অনেকটাই আশাহত হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন যদি ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে এমন কড়াকড়ি অব্যাহত রাখে এবং এটি কয়েক বছর চলে তাহলে তাদের এই ক্ষুদ্র ব্যবসা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
কোকো নাট নামের একটি দোকান, তারা শুধুমাত্র বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে চকলেট, বাদাম, মশলা এবং কসমেটিকস বিক্রি করে থাকে। দোকানটির মালিক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, আগে যেখানে প্রতিদিন তাদের সাড়ে তিন লাখ রুপি বেঁচা বিক্রি হতো। সেটি কমে এখন শুধুমাত্র ৩৫ হাজার রুপিতে চলে এসেছে। যারা এখন তার দোকানে আসছেন তাদের প্রায় সবাই মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতে গেছেন। কিন্তু নিউমার্কেট থেকে পণ্য কিনে ঢাকায় নিয়ে পণ্য বিক্রির যে ব্যবসাটি ছিল সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
অজয় শ, সেখানকার কসমেটিকসের দোকান রয়্যাল স্টোরের পঞ্চম প্রজন্মের মালিক। তিনি জানিয়েছেন, তার ১২৪ বছর পুরোনো দোকানের যে শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে। এখানকার পুরো মার্কেটটি একই অবস্থায় পড়েছে।
তিনি বলেছেন, “২০০৮-০৯ সালে নিউমার্কেটে স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যা একেবারে কমে যায়। ওই সময় থেকে মার্কেটটি বাংলাদেশিদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। মার্কেটের প্রায় সব দোকান তখন তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী পণ্য বিক্রি শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন এবং ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত ঝামেলার পর থেকে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। আমরা আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশি ক্রেতা পেতাম। যারা একেকজন গড়ে ১৫ হাজার রুপি খরচ করতেন। কিন্তু এখন আমরা দিনে পাঁচজন বাংলাদেশিও পাই না। আর তারা তাদের খরচের পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার রুপিতে নিয়ে গেছেন।”