স্বাভাবিকভাবে হেফজ বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে পুরো কোরআন মুখস্থ করতে সময় লাগে এক থেকে দেড় বছর। সেখানে মাত্র ৪৯ দিনে পুরো কোরআন হিফজ করল নোয়াখালীর বিস্ময় শিশু হাবিবুর রহমান (৮)।
বিস্ময়কর ও প্রখর মেধাবী এই হাবিবুর রহমান নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সুরেরগো পোলে অবস্থিত বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। সে সেনবাগ উপজেলার বীজবাগ ইউনিয়নের বালিয়াকান্দী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মাইনুদ্দিন রাসেলের ছেলে।
জানা গেছে, শিশু হাবিব ২০২২ সালে এক বছর নুরানী পদ্ধতিতে পড়ার পর ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে নাজেরা (কোরআন দেখে পড়া) বিভাগে পড়ে। এরপর ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৯ তারিখে কোরআন শরিফ হেফজ (মুখস্থ) শুরু করে। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪৯ দিনে পুরো কোরআন মুখস্থ করে সে। পাঁচ পৃষ্ঠা থেকে সবক দেওয়া শুরু। এরপর কখনো ১০ পৃষ্ঠা আবার কখনো ১৫ পৃষ্ঠা। এভাবে সবক দিয়ে হেফজ সম্পন্ন করে সে। এমন বিরল কৃতিত্ব অর্জনে তার শিক্ষক, সহপাঠী ও পরিবারের লোকরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
শিশু হাফেজ হাবিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! মাত্র ৪৯ দিনে কোরআন হেফজ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার শিক্ষক, সহপাঠী এবং পরিবারের সবাই আনন্দিত। আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন আমি যাতে বড় আলেম হতে পারি। আমি একজন বড় আলেম হতে চাই। শায়েখ আহমাদুল্লাহ হুজুরের মতো বড় আলেম হতে চাই এবং তার সঙ্গে দেখা করে তার থেকে দোয়া নিতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
এ ছাড়াও শিশু হাফেজ হাবিব আরও বলেন, আমি বড় আলেম হতে চাই, যেন আমার বাবা-মা মারা গেলে তাদের জানাজা পড়াতে পারি।
হাবিবুর রহমানের শিক্ষক হাফেজ মো. নুরুল আলম বলেন, সে পড়াশোনায় খুব আগ্রহী ছিল। হাবিব অত্যন্ত নম্র, ভদ্র এবং প্রখর মেধাবী ছেলে। সবাই যখন বিকেলে খেলাধুলা করতো তখন সে রুমের ভেতরে পিলারের পাশে বসে বসে পড়তো। সে যেদিন হাফেজ হয়েছে সেদিন বিকেলেও যথা সময়ে পড়তে বসে গেছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে বড় আলেম হিসেবে কবুল করুন। তার একটা স্বপ্ন শায়েখ আহমাদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে দেখা করা।
হাবিবুর রহমানের মা সাজেদা আক্তার বলেন, আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। এই ছেলে দুনিয়াতে আসার আগ থেকে তাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। আল্লাহ তায়ালা আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন, এজন্য আমি আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। শিক্ষকদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার বড় ছেলে আব্দুর রহমানও একই দিন হাফেজ হয়েছে। আল্লাহ তাদের মনের আশা পূরণ করুন এবং আল্লাহ দ্বীনের জন্য কবুল করুন।
বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ কারি শাহাদাত হোসাইন বলেন, হাবিবুর রহমান একজন বিস্ময়কর বালক। আল্লাহপাক তাকে কবুল করছেন বলেই মাত্র ৪৯ দিনে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করতে পেরেছে। আমরা তার সফলতা কামনা করি। তবে এতো অল্প সময়ে কোরআন মুখস্থ করার বিষয়টি মোটেও সহজ নয়। এটি আমাদের জন্য গর্বের। দোয়া করি আল্লাহ এই শিশুকে দ্বীনের জন্য কবুল করুন।