জীবিকার তাগিদে ২০০৯ সালে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের জালাল হোটেল এন্ড রেস্টেুরেন্টের বারান্দার একাংশ ভাড়া নিয়ে পান বিক্রি শুরু করেন আব্দুস সালাম। এরপর ওই বারান্দাতে পান বিক্রি করেই কেটে গেছে ১৫টি বছর। সম্প্রতি পেশা বদল করে নিজ বাড়িতে মুরগির খামার দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
সোমবার নিজ দোকানে শেষবারের মতো পান বিক্রি করে ব্যবসার ইতি টেনেছেন আব্দুস সালাম। পানদোকানির শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জালাল হোটেল, হারুন টি হাউজ ও দোকানের গ্রাহকরা বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে।
সোমবার সন্ধ্যায় জালাল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে কেককাটা, মিষ্টিমুখ ও উপঢৌকন প্রদানের মধ্য দিয়ে আব্দুস সালামের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় জালাল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের পরিচালক এসএম জলিল বলেন, সালাম ভাই আমার রেস্টুরেন্টের বারান্দার একাংশ ভাড়া নিয়ে পান বিক্রি করতো। পেশা বদল করার কারণে তিনি আজ শেষবারের মতো দোকান খোলেছেন। তার বিদায় অনুষ্ঠান একটু স্মরণীয় করে রাখতেই আমরা কেককাটা, মিষ্টিমুখের আয়োজন করেছি।
ইসলামাবাদ সিনিয়র মাদরাসার উপাধ্যক্ষ এমদাদুল হক বলেন, বাজারে অনেক পান দোকান থাকলেও সালাম ভাই ব্যতিক্রম। আমি ১৫ বছর ধরেই তার এখান থেকে পান কিনে খাই। আজকেও শেষবারের মতো পান কিনলাম। তবে সালাম ভাইয়ের হাতের বানানো পান আমরা মিস করবো।
গৌরীপুর পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, সালাম ভাই পান ব্যবাসায়ী হলেও তিনি এলাকায় পুড়িয়া সালাম নামে পরিচিত। কারণ পান বিক্রির পাশাপাশি তিনি বাদাম, নারিকেল, দারুচিনি, লং, বাদাম, কিসমিস সহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে কাগজে মুড়িয়ে বিক্রি করেন। যেটা আমাদের এখানে পুড়িয়া নামে পরিচিত। ব্যবসা ছেড়ে দেয়ায় আমরা সালাম ভাইকে যেমন মিস করবো, তেমনি তার পুড়িয়াও মিস করবো।
পান দোকানি আব্দুস সালাম বলেন, আমরা দেখেছি সরকারি- বেসরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলি হলে বিদায় সংবর্ধনা দেয় হয়। কিন্ত আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে যেভাবে গ্রাহক ও দোকান মালিক বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে আমি সত্যিই আনন্দিত। এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমি আমার দোকানের পান গ্রাহকদের সব বকেয়া খুশি হয়ে মওকুফ করে দিয়েছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন নতুন ব্যবসায় সফল হতে পারি।
আলোচনা সভায় অংশ নেন গৌরীপুর গণপাঠাগারের নির্বাহী পরিচালক আমিরুল মোমেনীন, ভুটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ, যুগান্তর প্রতিনিধি রইছ উদ্দিন, হারুন টি হাউজের পরিচালক মো. হারুন মিয়া, পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বিজন চন্দ্র সরকার প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, পানদোকানি সালামের বাড়ি গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুর গ্রামে। তার স্ত্রী গৃহিণী। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। মেয়ে পড়াশোনা করে মাদরাসায়।