আজ ৬ জুলাই, ঐতিহাসিক শেরপুরের ঝিনাইগাতী কাটাখালী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙামাটিয়া-খাঠুয়াপাড়া গ্রামে বর্বরোচিত গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা। এদিন মুক্তিযুদ্ধের কোম্পানি কমান্ডার নালিতাবাড়ীর নুরুন্নবী মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ একই পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন, মোফাজ্জল হোসেনসহ নাম না জানা আরো অনেক সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অসামান্য অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালের ‘স্বাধীনতা পদক’ (মরোনত্তর) দেওয়া হয় কাটাখালী সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ কোম্পানি কমান্ডার নুরুন্নবী মোহাম্মদ নাজমুল আহসান।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী কাটাখালী সেতুটি সংরক্ষণসহ শহীদদের স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। কাটাখালী সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ কোম্পানি কমান্ডার নুরুন্নবী মোহাম্মদ নাজমুল আহসানের স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সেতুর পাশের স্থানটি ‘শহীদ নাজমুল চত্বর’ পার্ক বানিয়েছে জেলা প্রশাসন। দিবসটি ঘিরে কাটাখালী ও তার গ্রামের বাড়ি এবং নালিতাবাড়ীর নাজমুল স্মৃতি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
১৯৭১ সালের ৫ জুলাই অপারেশন শেষ করে মুক্তিযোদ্ধারা রাঙামাটি খাঠুয়াপাড়া গ্রামে দুইটি দলে বিভক্ত হয়ে হাজী নঈমুদ্দিন ও হাজী শুকুর মামুদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে ৬ জুলাই সকালে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই গ্রামে ঢুকার এক মাত্র কাঁচা সড়কে দুইদিক থেকে ব্যারিকেড দেয় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার, আলবদররা। মুক্তিযোদ্ধারা বিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে করতে পিছু হটে।
এসময় পাকহানাদারদের বেপরোয়া গুলিতে কোম্পানি কমান্ডার নুরুন্নবী মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও ভাতিজা আলী হোসেন শহীদ হন। বাকি মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান পেলেও, বর্বরোচিত হামলার শিকার হন রাঙামাটি খাঠুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের ৬০ থেকে ৭০ জনকে কোমরে দড়ি বেঁধে নির্যাতন করা হয়। তাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সমভ্রমহানি করে কয়েকজন নারীর। পরে অমানবিক নির্যাতন করে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় গ্রামবাসী আয়াতুল্ল্যা, সামেছ মিস্ত্রি, মহেন্দ্র অধিকারী, আব্বাছ আলী, আমেজ উদ্দিন ও বাদশা আলীকে। ওইসময় আহত হন অনেকেই। দালালদের বাঁধার মুখে সেদিন লাশও দাফন করতে পারেননি শহীদদের স্বজনরা। কলার ভেলায় স্বজনরা সেই লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন নদীতে।
প্রতিবছর দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।