সুদীর্ঘ ৪২ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে অবসরে গেলেন গুণি শিক্ষক অধ্যক্ষ মো. নূরুল আলম ফকির(৬০)। তিনি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী গন্ডা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ১৯৮২ সালে মাদ্রাসাটির একজন আরবি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। নিজ মেধা ও যোগ্যতায় সত্যভাষী এই গুণী শিক্ষক ২০০৪ সালে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। দীর্ঘ ৪২ বছরের শিক্ষকতা জীবন পার করে ৩১ ডিসেম্বর-২০২৩ (রবিবার) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একই গ্রামের প্রয়াত মুহাম্মদ আলী ফকিরের ছেলে।
মো. নূরুল আলম ফকির ছাত্র জীবনেও ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। তিনি ১৯৭৪ সালে রাউলেরচর আলিম মাদ্রাসা থেকে প্রথম বিভাগে দাখিল(এসএসসি) পাস করেন। পরে ১৯৭৬ সালে কাতলাসেন কাদেরিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে আলিম( এইচএসসি) পাস করেন। ১৯৭৮ সালে একই মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে ফাজিল ও ১৯৮০ সালে কামিল পাস করেন।
তিনি শুধু একজন গুণী শিক্ষক-ই নন, তিনি একজন আদর্শ স্বামী এবং আদর্শ পিতাও। সংসার জীবনে তার রয়েছে পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন। পড়াশোনা শেষ করিয়ে একমাত্র মেয়েকেও তিনি উপযুক্ত পাত্রের কাছে বিয়ে দিয়েছেন।
নূরুল আলম ফকিরের অগণিত ছাত্র-ছাত্রী দেশের বিভিন্ন সরকার- বেসরকারি অফিস-আদালত, প্রশাসনিক উচ্চ পদস্থ, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন।
নূরুল আলম ফকিরের স্মৃতিচারণা করে তার হাতে গড়া ছাত্র গন্ডা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘ তিনি আমার প্রিয় একজন শিক্ষক। তিনি খুব সত্যবাদী মানুষ। দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন নিখুঁত। মাদ্রাসাটির প্রতিটি কণায়-কণায় রয়েছে হুজুরের স্মৃতি। হুজুরের ছাত্র হয়ে উনার সাথে শিক্ষকতা করতে পেরে গর্বিত। তবে হুজুরের বিদায় সত্যিই বেদনার।’
মাদ্রাসা থেকে পিতার বিদায়ের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে পুত্র ফয়জুল আলম ফকির নিজেকে একজন সৌভাগ্যবান ও গর্বিত সন্তান বলে মন্তব্য করেন। সকলের কাছে তিনি তার পিতার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
অবসর বিষয়ে অনুভূতি সম্পর্কে চাইলে মো. নূরুল আলম ফকির বলেন, ‘আমার দীর্ঘ ৪২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে চেষ্টা করেছি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে। শিক্ষার্থীদের আদর্শ পাঠদানের মাধ্যমে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছি। মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সকল সহকর্মীদের সাথে মিলেমিশে চলার চেষ্টা করেছি। তারপরও মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমি কোন ভুল করে থাকলে সকলেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আমিও সবার জন্য দোয়া করি।’