বিয়ের সঙ্গে শীতের একটি নীবিড় সম্পর্ক আছে। তাই তো এই ঋতুতে বিয়ের হিড়িক পড়ে যায় চারপাশে। বিশেষ কিছু সুবিধা থাকার কারণে এই সময়টা বিয়ের উপযুক্ত সময় বলে মনে করা হয়। চলুন সেই সুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
পরিশ্রমে সুবিধা:
বিয়ে বাড়িতে অনেক কাজ থাকে। বিয়ের আয়োজনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল কাজে প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। গরমের দিনে একটু কাজ করলেই হাঁপিয়ে অস্থির হয়ে যান অনেকে। কিন্তু শীতের দিনে এমনটা হয় না। বরং সুবিধা পাওয়া যায়। এসময় দৌড়ঝাঁপ করে কাজ করলে ঠান্ডা কম অনুভূত হয়। তাই শীতকাল বিয়ের জন্য উপযুক্ত সময়।
ডেকোরেশন:
বিয়ে বাড়িতে সাজসজ্জার জন্য অনেক ফুলের প্রয়োজন হয়। আর অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে বেশি ফুল পাওয়া যায়। এসময় নানা ধরনের ফুল ফোটে। যেমন: ডালিম, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, অর্কিড, গাঁদা, গোলাপ ও জুঁইসহ আরও বিভিন্ন প্রকার টাটকা ফুল পাওয়া যায়। তাই আপনি চাইলেই পুরো বিয়ে বাড়ি কৃত্রিম ফুলের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ফুল দিয়েই সাজাতে পারেন। এর ফলে বিয়ে বাড়ির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
সাজগোজে স্বস্তি:
বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েদের পুরো আকর্ষণ থাকে সাজ পোশাকের ওপর। তারা নিজেদের খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে চায়। কিন্তু গরমের দিনে যতই সুন্দর করে সাজুক না কেন তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। বিশেষ করে সেসময় অতিরিক্ত গরমে ঘেমে মেকআপ গলে পরতে থাকে। এতে সাজ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু শীতের সময় এমন কোনো ভয় থাকে না। এসময় সাজগোজ হয় সহজ, সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী। তাই বর-কনের সাথে সাথে অনুষ্ঠানে আসা সবাই বিয়েবাড়ির আনন্দ নিতে পারে।
ফল কেনার ঝামেলা নেই:
বিয়ে বাড়িতে নানা ধরনের ফল নেওয়ার রেওয়াজ থাকে। গরমের সময় গ্রীষ্মকালীন অনেক ফল পাওয়া যায়। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় নানারকমের মৌসুমি ফল কিনতে হয়। এতে আলাদা করে কিছু অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু শীতের সময় ফল কেনার তেমন ঝামেলা নাই। কারণ এ সময় বাজারে তেমন ভালো কোনো ফল পাওয়া যায় না।
বিদ্যুৎ বিল:
গরমের সময় বিয়ের অনুষ্ঠান হলে সেখানে লাইটিংয়ের সাথে সাথে ফ্যানের ব্যবস্থাও করতে হয়। নাহলে অতিরিক্ত গরমে সেখানে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে ওঠে। এছাড়া বিয়ে বাড়িতে অনেক অতিথি আসে। এজন্য দেখা যায়, বাড়িতে আলাদা করে মেঝেতে বিছানা করা হয়। তাই সেখানেও ফ্যানের ব্যবস্থা করা লাগে। এতে অন্য সময়ের তুলনায় বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। কিন্তু শীতের সময় এমন কিছুই হয় না। এসময় ঠান্ডা থাকার কারণে ফ্যানের প্রয়োজন পরে না। আবার শীতের সময় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক রাত পর্যন্ত ঘরের টিভি, লাইট চালু করে রাখা হয় না। ফলে বিদ্যুৎ বিল অন্য সময়ের তুলনায় কম আসে।
ঠান্ডা আবহাওয়া:
বিয়েবাড়িতে প্রচুর পরিমাণে খাওয়া-দাওয়া হয়। বিশেষ করে তেল জাতীয় খাবার। আর গরমের সময় তেলযুক্ত খাবার খেয়ে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে অশস্তিতে ভুগতে হয়। অস্থিরতা কাজ করে । অনেকের পেটের সমস্যা হয় ও উচ্চরক্তচাপ বেড়ে যায়। তবে শীতের সময়ের বিয়ে বেশ আরামদায়ক। এসময় খাবারের পরিমাণ বেশি হলে বা তেলযুক্ত খাবার খেলেও খুব বেশি খারাপ লাগে না, ঘাম হয় না। অস্থিরতা কাজ করে উচ্চরক্তচাপের সমস্যা হয় না।
লম্বা ছুটি:
কর্ম ব্যস্ততার এই যুগে সব সময় ছুটি পাওয়াটা খুব মুশকিল। সারা বছর অফিস, বাচ্চাদের স্কুল সবকিছু খোলা থাকে। তাই চাইলেই কোথাও বেড়াতে বা কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। বেশিরভাগ স্কুলগুলোতে নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। তাই ডিসেম্বরে স্কুল বন্ধ থাকে। এসময় তাদের ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে বড়রাও বেড়াতে যেতে পারেন। আর এভাবেই সকল আত্মীয়-স্বজন একত্রিত হওয়ার সুযোগ পান। তাই বিয়ের জন্য বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালকে বেশিরভাগ মানুষ বেছে নেন।