ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী ও তার দুই ছেলের পাঁচ বছরের ব্যবধানে নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ, আয় এবং স্থাবর সম্পত্তি স্থির রয়েছে। গত ৫ বছরে তাদের সম্পত্তি বাড়েনি বা কমেনি। একাদশ ও দ্বাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় এমন তথ্যই দেখা গেছে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় দেখা যায়, রুহুল আমিন মাদানীর নগদ টাকা ছিল ৩ লাখ। পাঁচ বছরের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই সংখ্যা অর্থাৎ নগদ টাকার পরিমাণ তিন লাখই দেখানো হয়েছে। দুই হফলনামাতেই প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল দুই ছেলের নগদ টাকার ঘর ফাঁকা দেখানো হয়েছে। পাঁচ বছর আগে এমপি মাদানীর ব্যাংকে জমা টাকা পরিমাণ ছিল দুইটি অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৪০ হাজার ৪৩৯ এবং ১৪ হাজার ৮৪৩ টাকা। আর এবার একটি অ্যাকাউন্টে ৩৯ টাকা কমে হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা এবং অন্যটি অপরিবর্তিত দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় বড় ছেলে মো. হোসাইন প্রিন্সের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা দেখানো হয়েছিল ৪৯ লাখ ৮১ হাজার ৩৯৪ টাকা এবং ছোট ছেলে হাসান মাহমুদের ছিল ২০ লাখ ৬৮ হাজার ৪০০ টাকা। পাঁচ বছর পর এবারের হলফনামায় দেখানো হয়েছে একই তথ্য। জমা টাকার পরিমাণ পাঁচ বছর আগে যা ছিল এখনোই তাই দেখানো হয়েছে।
এছাড়া স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে এমপি মাদানীর নিজ নামে কৃষি জমি এক কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের প্রায় ৫.৪৮৫৪ একর, অকৃষি জমি এক কোটি ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩.৫৯৩৩ একর এবং এক কোটি ৫১ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪ টাকা মূল্যের ত্রিশালের দরিরামপুর এলাকায় একটি ছয়তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন ও ১০ লাখ টাকা মূল্যের একটি ইটের দেয়াল বিশিষ্ট টিনের গোডাউন ছিল বলে উল্লেখ ছিল। পাঁচ বছর পর সবকিছুই অপরিবর্তিত দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে ছেলে হোসাইন প্রিন্সের নামে সাড়ে ২৬ শতাংশ কৃষি জমি, যার মূল্য ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং হাসানের নামে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১৬ শতাংশ কৃষি জমি দেখানো হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। এবারও এগুলোই স্থির দেখানো হয়েছে হলফনামায়।
দুই হলফনামায় দেওয়া তথ্যে ছেলেদের আয় অপরিবর্তিত দেখানো হলেও পাঁচ বছরে বেড়েছে এমপি মাদানীর আয়। সংসদ সদস্য হওয়ার আগে মাদানীর বার্ষিক আয় ছিল ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮০ টাকা। যার মধ্যে কৃষি খাতে (ফিসারি) আয় ছিল ৩০ লাখ ও ব্যবসা থেকে আয় ছিল ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮০ টাকা। পাঁচ বছরে কৃষিখাতে আয় কমে ৪ লাখ ৮০ টাকা হয়ে গেলেও ব্যবসায় প্রায় পাঁচগুণ আয় বেড়ে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৮৪ টাকা। তবে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানীর তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেননি এমপি মাদানী।
অন্যদিকে পাঁচ বছর আগে কৃষিখাত ও ব্যবসায় ছেলেদের যে পরিমাণ আয় দেখানো হয়েছিল এবারের হলফনামায় সেই পরিমাণই অপরিবর্তিত রয়েছে। আগে ছেলে হাসান মাহমুদের কৃষিখাতে (ফিসারি) আয় ছিল ৮ লাখ টাকা, এবারো তাই রয়েছে। অপর ছেলে হোসাইন প্রিন্সের ব্যবসা খাতে আয় দেখানো হয়েছিল ১৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, যা পাঁচ বছর পরও একই পরিমাণ দেখানো হয়েছে।
অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে মাদানি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হওয়ার আগে ছিল ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মাইক্রেবাস, ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের ট্র্যাংকার ও ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ৮২৩ টাকা মূল্যের জিপ গাড়ি এবং ছেলে হোসাইন প্রিন্সের নামে ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি মাইক্রোবাস ও ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেটকার ছিলো। এমপি হওয়ার পর নতুন করে ৯২ লাখ ৯৬ হাজার একটি ল্যান্ডক্রুজার জিপ কিনেছেন। তবে আগের নিজের নামে মাইক্রোবাস ও ছেলের দুটি গাড়ির তথ্য নেই এবারের হলফনামায়। এছাড়াও নিজের নামে ৩০ ভরি স্বর্ণ দেখানো হলেও স্ত্রীর নামে কোনো স্বর্ণই দেখানো হয়নি। আর দুই হফলনামাতেই ৩৫ হাজার টাকার টিভি-ফ্রিজ ও ১৫ হাজার টাকার ৪টি খাট ও সোফা সেট অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে পাঁচ বছর আগে রুহুল আমিন মাদানীর ইসলামি ব্যাংকে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৪ টাকা ও অন্যান্য ঋণ ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৮৯৮ টাকা। বর্তমানে তার ঋণ কিছুটা বেড়েছে। ইসলামি ব্যাংকে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯২ হাজার ৫৯ টাকা ও অন্যান্য ঋণ আছে আরও ১ কোটি ৭ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৪ টাকা।