1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

ভালোবাসার সংসার আজ কেবলই ছবি

উবায়দুল হক, ময়মনসিংহ
  • আপডেট : বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩

ভালোবাসার সংসার আজ কেবলই ছবি। আনন্দধারার যে মুহুর্ত ছবিতে ধারণ হয়েছিল তা ভূখণ্ডে আর হবে না৷ কার্তিকের একটি ভয়ংকর বিকেল আজীবনের জন্য কেড়ে নিয়েছে সেই সুযোগ।

ভালোবেসে ছয় বছর আগে সংসার পেতেছিলেন জুনায়েদ ও হীরা দম্পতি। চার বছর আগে তাদের কোল আলো করে পৃথিবীতে আসে এক রাজপুত্র। তার নাম রাখা হয় হোসাইন। সুখেই কাটছিলো তাদের ভালোবাসার সংসার। তবে ভৈরবের মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে হীরার প্রাণ। সুখের সংসার নিমিষেই হয়ে গেল তছনছ।

ট্রেন দুর্ঘটনায় বগিটি দুমড়ে-মুচড়ে ছিটকে পড়ার সময় সঙ্গে থাকা ছোট ভাই তরিকুল (১৫) ও একমাত্র সন্তান হোসাইনকে কাছে টেনে নিয়ে নিরাপত্তা দিতে চেয়েছিলেন হীরা। কিন্তু তা আর হয়নি। তার মাথা চলে যায় ট্রেনের জানালার বাইরে। মুহূর্তেই মাথা থেতলে গিয়ে বগির নিচে আটকা পড়েন হীরা।

বগি ভেঙ্গে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলেও এ সময় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান স্বামী জুনায়েদ, একমাত্র সন্তান হোসাইন এবং হীরার ছোট ভাই তরিকুল। এই তিনজন বেঁচে ফিরলেও হীরার মৃত্যু তছনছ করে দিয়েছে তাদের সংসার। নিহত হোসনা আক্তার হীরা কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা ইউনিয়নের সাকুয়া নদীর পশ্চিম পাড়ের জোনায়েদ হোসেনের স্ত্রী এবং ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুসল্লি ইউনিয়নের নবীয়াবাজ গ্রামের আরজু মিয়ার মেয়ে।

গত সোমবার বিকালে দুর্ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিহত হোসনা আক্তার হীরার মরদেহ শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হয় বাবার বাড়ি নবীয়াবাজ গ্রামে। হীরার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনেরা। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে স্বামী জুনায়েদ। একমাত্র অবুঝ শিশু তখন এক স্বজনের কোলে বেঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে বুঝতেই পারেনি, মা বলে ডাকার মতো মানুষটিই আর তার নেই!

গ্রামে দিয়ে দেখা যায়, মধ্যরাতের সুনসান নিরবতা ভেঙ্গে জেগে আছে নবীয়াবাজ গ্রামটি। গ্রামের বড় একটি আমগাছের পাশের বাড়িটিই হীরাদের। বাড়িভর্তি মানুষ শোকে মুহ্যমান। হীরাদের ছোট্ট একটি ঘরের বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে কেঁদে চলেছেন স্বামী জুনায়েদ।

সেখানেই কথা হয় ট্রেন দুর্ঘটনার সময় বোনের পাশের আসনে থাকা কিশোর তরিকুলের সঙ্গে।

সে জানায়, ট্রেনটিতে তাদের বগিটি যখন হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে, তখন তার বোন হীরা তাকে এবং হোসাইনকে কাছে টেনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এর আগেই তার বোন হীরার মাথা জানালার বাইরে চলে যায়। ভগ্নিপতি জুনায়েদ, সে আর তার ভাগ্নে হোসাইন ট্রেনের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে অক্ষত অবস্থায় বের হতে পারলেও জানালার নিচে মাথা আটকে যাওয়া বোনকে বের করা যায়নি। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বগির অংশটি কেটে তার বোনের লাশ উদ্ধার করেন।

হীরার বড় ভাই আরিফ জানান, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে হীরা ৪র্থ। প্রেম করে ছয় বছর আগে হীরার সঙ্গে জুনায়েদের বিয়ে হয়েছিল। রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে থেকে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন জুনায়েদ। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তাই ঢাকাতেই অস্থায়ী বসতি গড়েন।

ঢাকা থেকে বাবার বাড়িতে বেড়ানোর জন্য স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে গত পহেলা অক্টোবর নবীয়াবাজ গ্রামে আসেন হীরা। বেড়ানো শেষে ঢাকায় ফেরার জন্য স্বামী-সন্তান ও ছোট ভাই তরিকুলকে নিয়ে সোমবার কিশোরগঞ্জে গিয়ে এগারসিন্দুর ট্রেনে ওঠেছিলেন। কিন্তু ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বামী-সন্তান ও ছোটভাইসহ তিনজন বেঁচে গেলেও হীরা মারা যান। বাবার বাড়িতে তিনি শেষবারের মতো ফিরেছেন কফিনবন্দি লাশ হয়ে, বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আরিফ।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি