ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই দেখা মিলবে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত শস্য ভান্ডার খ্যাত চরাঞ্চল রাজিবপুর ইউনিয়ন। এই চরাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল ঈশ্বরগঞ্জবাসীর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়। কিন্তু এক সময়ের প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র নদ বালুখোরদের দাপটে হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ। নদ বিলীন করে এবার সেই বালুখোররা নেমেছে চরাঞ্চল মানুষের ফসলি জমি ও বাড়ি ভিটে বিলীন করতে।
অভিযোগ রয়েছে রাজিবপুর ইউনিয়নের ভাটি চর নওপাড়া গ্রামে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বিলীন হয়ে গেছে অনেক ফসজি জমি। অনুমতি ছাড়া পুকুর খননের আড়ালে বালু বিক্রি করার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বিপুল সংখ্যক কৃষি জমি।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ভাঙনের মুখে পড়েছে প্রায় ২০ পরিবারের বাড়ি ভিটে। বাড়ি ভিটে ভাঙনের শঙ্কায় এই পরিবারগুলোর মাথায় এখন হাত পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে গভীর করে বালু ও মাটি উত্তোলন করায় পাড় ভেঙে কৃষি জমি,গাছপালা ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। পরিবারগুলোর বসতবাড়িও এখন ভাঙনের মুখে পড়েছে।এতে করে জমি ও বাড়ি ভিটে নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে অনেক কৃষক।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বালু ব্যবসায়ী মো. দুলাল মিয়া(৫৫) এর নামে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। দুলাল একই গ্রামের মৃত নূর বকসের ছেলে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকেদের দাবি, তাদের ফসলি জমি ও বাড়ি ভিটেসহ ৫০ শতাংশের বেশি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভুক্তভোগী রুহুল আমীন নামের একজন বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে গভীর পুকুর খনন করে বালু উত্তলন করার কারণে আমাদের ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙানের মুখে পড়েছে আমাদের বাড়িঘর। আমরা বাউ পোলাপান নিয়ে এখন কোথায় যাব?আমরা এর প্রতিকার ও সুষ্ঠু বিচার চাই ।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. সুমন মিয়া(৩০), মো.সাইদুল ইসলাম (৩৫) ও মো. আরফান আলী জানান, গত ১৫-২০ দিন আগেও দুলাল মিয়া আবার ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে আসে। তখন আমরা বাঁধা দেই। এসময় তারা আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তাকে সেল্টার দেয় ইউনিয়ন যুবসংহতির সভাপতি ইউসুফ আলী। হুমকির বিষয়ে যুবসংহতির ইউসুফ আলীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেন।
আবুল হাসেম (৬৫) নামের এক কৃষক বলেন, ফসলি জমি ভেঙে যাওয়ার কারণে আমরা কোন ফসল উৎপাদন করতে পারি না। আমাদের আর কোন রাস্তা নাই, এই গর্তে (পুকুরে) বউ পোলাপান লইয়া আমরা মরবাম (মরে যাব)।
কৃষাণী মোসা. হাজেরা খাতুন (৫৫) ও সেলিনা বেগম (৫০) বলেন, এই জমিগুলোতে তরিতরকারি মাড়াই করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও সংসার চলতো। এখন আমরা খুব বেকায়দায় আছি। আমরা আমাদের কৃষি জমি আগের মতো দেখতে চাই।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মো. দুলাল মিয়া বলেন, ২০০৫ সালে আমি নিজের জায়গায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করেছিলাম মাছের ব্যবসা করার জন্য। পরে পুকুরের পাড় গুলো আস্তে আস্তে ভেঙে যায়। সম্প্রতি অতিবৃষ্টির কারণে তাদের আরও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি পুকুরে মাছের ব্যবসা করি, বালু উত্তোলন বা বিক্রি করি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে (নায়েব) বলা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।