সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শেরপুরের কারিগররা। অর্ডার নিয়ে দেশের অন্তত দশ জেলার বিভিন্ন মন্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরী হচ্ছে পাল পাড়াগুলোতে। গেলো কয়েক বছরের চেয়ে এবার প্রতিমার চাহিদা বেশি থাকায় খুশি কারিগররা। তবে প্রতিমা তৈরীর উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলেও বাড়তি মজুরি না পাওয়ার ক্ষোভ কারিগরদের। এদিকে পূজা সামনে রেখে মন্দিরগুলোতেও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
প্রতিমা কারিগর দয়াল চন্দ্র পাল। ষাট বছর ধরে করছেন প্রতিমা তৈরীর কাজ। পূর্ব পুরুষের পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে একই পেশায় কাজ করছেন তার ছেলেও। শুধু দয়াল চন্দ্রের পরিবার নয়, বিভিন্ন পালপাড়ার শতাধিক পরিবার যুক্ত রয়েছেন প্রতিমা তৈরীর কাজে। পূজা শুরুর অন্তত তিন মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু হয় শেরপুরের পালপাড়ায়। এখানকার প্রতিমা যায় পার্শ্ববর্তী দশ জেলায়।কারিগর দয়াল চন্দ্র পাল বলেন, এটা আমার বাপ দাদার পেশা। আমিও করছি, আমার ছেলেও প্রতিমা তৈরীর কাজ করে। আমাদের তৈরী প্রতিমা পাশের জেলা জামালপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। যেভাবে জিনিসের দাম বাড়তেছে, এখন কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এরপরও পূর্বপুরুষের কাজটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।
আকার ও নকশা ভেদে প্রতিটি প্রতিমা বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। গেলো কয়েক বছরের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকলেও কাঁচামালের খরচ বাড়ার আক্ষেপ কারিগরদের মুখে। রয়েছে কাঙ্খিত মজুরি না পাওয়ার অভিযোগও। শেরপুরের বিভিন্ন পাল পাড়ায় এখন চলছে ব্যস্ত সময়। তাই পুরুষ কারিগরের পাশাপাশি এখানে কাজ করছেন পরিবারের নারী সদস্যরাও। কারিগর গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, এখন তো মাটির দামই বেশি। এছাড়া খড়ের দাম, রঙের দামও বেড়েছে। এবার অনেক অর্ডার আসলেও কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে। যে হারে দাম বাড়ে, ওই হারে মজুরি বাড়ে না। তবুও অর্ডারের কাজ তো করতেই হবে। গৌরী পাল বলেন, পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি শেষ সময়ে আমরাও এখন হাত লাগাচ্ছি কাজে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কাজে বেশ ভাটা পড়ছে। এখন সবাই মিলে শেষ করে দ্রুত ডেলিভারি দেয়াটাই বড় বিষয়।
এদিকে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ততা বেড়েছে জেলার বিভিন্ন মন্দিরগুলোতেও। শত বছরের পুরোনো মন্দিরগুলোতে চলছে ঐতিহ্য ধরে রাখার জোর প্রস্তুতি। পূজা চলাকালে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ আয়োজকদের। মার্চেন্ট ক্লাবের মিহির দত্ত বলেন, এই মন্দিরটি শতবর্ষী মন্দির। এখানে স্বাধীনতার পরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক বড় বড় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা আসতেন। আমরা মার্চেন্ট ক্লাবের পক্ষ থেকে এবার পঞ্চাশ বছর পূর্তি দূর্গোৎসব আয়োজন করতেছি। এটা একটা বড় ভাগ্যের বিষয়। শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিওর মন্দিরেও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পূজা আরো বর্ণিল করতে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ও পূজা চলাকালে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহযোগীতা চান আয়োজকরা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুব্রত কুমার দে বলেন, পূজা উৎসবমুখর করতে পুলিশ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সর্বোস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি। এদিকে পূজোতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখবে জেলা পুলিশ। শেরপুরের পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম বলেন, পূজা পূর্ব সময়ে প্রতিমা তৈরী, পূজা চলাকালে, প্রতিমা বিসর্জন ও পূজা পরবর্তী সময়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখবে জেলা পুলিশ। এছাড়া শতভাগ মন্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও আয়োজকদের সম্প্রীতি কমিটি করা হয়েছে। সবার সহযোগিতা ও সমন্বয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবার পূজা সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।
আসছে ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এ বছর শেরপুরে ১৫৬টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দূর্গাপূজা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন শতাধিক প্রতিমা যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।