1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিল ভারত

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের আরও অবনতি হলো। আজ বৃহস্পতিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। প্রায় একই সঙ্গে শোনা যাচ্ছে, কানাডাও ভারতে তাদের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা অনেক কমিয়ে দিতে চলেছে। এটা সত্য হলে একই ব্যবস্থা ভারতও গ্রহণ করবে।

ভিসা দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখার খবর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানায়নি। যদিও অনলাইন ভিসা দেওয়ার কাজ যে সংস্থা করে সেই ‘বিএলএস ইন্টারন্যাশনাল’ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, প্রয়োগ–সংক্রান্ত কারণে আপাতত ভারতীয় ভিসা পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত এই পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো খালিস্তানি আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে কানাডার সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন বেশ কিছুকাল ধরেই চলছে। ভারতের চোখে খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতবাদী শিখ সম্প্রদায়ের হরদীপ সিং নিজ্জর গত জুনে খুন হন। তাঁর হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতের এজেন্টদের হাত ছিল এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ তাঁদের হাতে রয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

এই অভিযোগে কানাডা ভারতীয় দূতাবাসের এক শীর্ষ কর্তাকেও বহিষ্কার করে। তারপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। ভিসা বন্ধ ও দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত তারই অঙ্গ। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতও কানাডা দূতাবাসের এক শীর্ষ কর্তাকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।

ভারত-কানাডা সম্পর্ক এমন খারাপ পর্যায়ে কোনো দিন নামেনি। কানাডার সঙ্গে এভাবে ভিসা সম্পর্কে সাময়িক ছেদ করার ঘটনাও এই প্রথম। কোভিডের সময় অবশ্য বহু দেশের নাগরিকদের জন্যই ভিসা স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল অন্য বিষয়।

ভারত অবশ্য দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, নিজ্জর খুনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। তাঁর হত্যা গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফল। ভারতে নিষিদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর (এসএফজে) অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন নিজ্জর। গত জুনে ভ্যাঙ্কুভারের সারে এলাকায় গুরুনানক শিখ গুরুদ্বারের কাছে মুখোশধারী অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত যান। সেই মৃত্যুর পেছনে ভারতীয় এজেন্টদের হাত থাকার অভিযোগ আনেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।

পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে এক বিবৃতিতে ট্রুডো বলেন, এ বিষয়ে তাঁর সরকারের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ আছে। তিনি এ কথাও বলেন, তাঁর দেশের নাগরিকের হত্যায় বিদেশি হাত থাকলে তা কানাডার ‘সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং ওই কাজ অসমর্থনীয়’। সত্য উদ্‌ঘাটনে তিনি ভারতকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ট্রুডোর ওই প্রকাশ্য অভিযোগ অস্বীকার করলেও ‘সত্য উদ্‌ঘাটনে’ ভারত সহযোগিতা করবে কি না, সে বিষয়ে সরকারিভাবে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু সম্পর্ক যে তলানিতে ঠেকছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে পরবর্তী ঘটনাবলিতে।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র সে দেশের সংবাদপত্র ‘দ্য ন্যাশনাল পোস্ট’–কে জানিয়েছে, ভারতে নিযুক্ত কয়েকজন কূটনীতিককে সামাজিকমাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কানাডা ভারতে কূটনীতিক ও কর্মী কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সূত্রের খবর অনুযায়ী, কানাডা দিল্লির হাইকমিশন ছাড়াও মুম্বাই, চণ্ডীগড় ও বেঙ্গালুরুতে কনস্যুলেট অফিসে নিরাপত্তা আরও জোরদার করার অনুরোধ জানিয়েছে।

একইভাবে কানাডাকে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে বলেছে ভারতও। সে দেশে ভারতীয় দূতাবাসের ওপর হামলার বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর আনা অভিযোগের পর সে দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ভারতীয় হিন্দুদের কানাডা ত্যাগ করতে হুমকি দিয়েছে। ওই হুমকির পর ভারতও কানাডাগামী সব ভারতীয়কে, বিশেষ করে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সতর্ক ও সজাগ থাকতে পরামর্শ দিয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই কানাডায় আরও এক ‘খালিস্তান আন্দোলন’–এর নেতা সুখদুল সিংয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। অবশ্য ভারতের চোখে সুখদুল সিং ওরফে সুখা দুনেকা একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ সন্ত্রাসী। তিনি খালিস্তানি জঙ্গি আর্শদীপ সিংয়ের ঘনিষ্ঠ সহোযগোী। আর্শদীপকে ভারত অনেক দিন ধরেই দেশে ফেরাতে চাইছে। নিজ্জরকেও ভারত ফেরাতে তৎপর ছিল। তাঁর মাথার দাম ধার্য হয়েছিল ১০ লাখ রুপি।

সুখদুল সিং খুন হন কানাডার উইনিপেগ শহরে। ভারতীয় সূত্রের দাবি, দুই সন্ত্রাসী দলের লড়াইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে ভুয়া পাসপোর্ট করে তিনি পাঞ্জাব থেকে কানাডা চলে যান। তখনই তাঁর বিরুদ্ধে ৭টি অপরাধের অভিযোগ ছিল। তাঁকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে পাঞ্জাবের দুই পুলিশ কর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

ভারতীয় গোয়েন্দাদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে পাঞ্জাব থেকে বিদেশে মানুষ পাচার বেড়ে গিয়েছে। অধিকাংশের গন্তব্য কানাডা। দুই দেশেই বিভিন্ন চক্র এই বিষয়ে সক্রিয়। ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির পর গতকাল বুধবার ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) প্রধানত পাঞ্জাব থেকে বিদেশে পলাতক অপরাধীদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। মোট ২৯ অপরাধীর সেই তালিকায় কানাডায় চলে যাওয়া অষ্টম ভারতীয় হিসেবে নাম রয়েছে সুখদুল সিংয়ের।

তালিকা প্রকাশের দিনই সুখদুলের মৃত্যু হয়। কানাডা ছাড়াও এই অপরাধীরা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, পর্তুগাল, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া ও জার্মানিতে রয়েছেন বলে এনআইএর দাবি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি