সৌদি আরবের জেদ্দায় স্থানীয় আবু নাসেরের বাড়িতে কাজ করেন বাংলাদেশি কর্মী দেলোয়ার হোসেন ও মনির হোসেন। মনির ছয় বছর আর তার বড় ভাই দেলোয়ার চার বছর ধরে কাজ করছেন সেখানে। দীর্ঘদিন কাজ করায় মালিক আবু নাসেরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে তাদের। অর্জন করেছেন আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা। সেই সম্পর্কের টানে সবাইকে চমকে দিয়ে কর্মীর বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে ছুটে এসেছেন আবু নাসের।
নিজেকে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয়া এই সৌদি নাগরিক এক সপ্তাহ ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রামীণ মেঠো পথ। কখনো রাখাল হয়ে গরু নিয়ে যাচ্ছেন মাঠে আবার পুকুরে দিচ্ছেন মাছের খাবার। গ্রামের মানুষ কীভাবে জীবনধারণ করে সেটিও দেখছেন নিজের চোখে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর আবু নাসের বাংলাদেশে পা রাখলে বিমানবন্দর থেকে দেলোয়ারের স্বজনেরা তাকে বরণ করে নেন। পরে ত্রিশালের মঠবাড়ী ইউনিয়নের মঠবাড়ী গ্রামে নিয়ে আসেন এই সৌদি মালিককে। এক সপ্তাহে তিনি মনের আনন্দে গ্রামের আশেপাশের এলাকা ছাড়াও ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছেন। খেয়েছেন বাংলাদেশি নানা খাবার। সবমিলিয়ে দারুণ সময় কাটিয়েছেন আবু নাসের। এখানকার মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ এই সৌদি মালিক।
অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আবু নাসের বলেন, এ দেশের গ্রাম এতো সুন্দর তা এখানে আসার আগে জানা ছিল না। চারদিকে সবুজ, পুকুর, পানি, মাছ শাক-সবজির বাগান। আমার দেশে এসব শুধু বাজারেই দেখেছি। কিভাবে উৎপাদন হয় এখানে তা দেখলাম, আমি খুবই খুশি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেমন সুন্দর, এখানকার মানুষও তেমন ভালো এবং অতিথিপরায়ণ। আমি যাদের কাছে এসেছি তাদেরকে নিজের পরিবারের সদস্যদের মতোই মনে হচ্ছে। এই পরিবারের দুজন সদস্য আমার বাড়িতে কাজ করে। তাদেরকে আমি নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি। তারাও আমাকে খুব শ্রদ্ধা করে।
অতিথির এমন আনন্দ দেখে খুশি দেলোয়ার ও মনিরের পরিবারও। স্থানীয়রা বলছেন, মালিক আবু নাসেরের সঙ্গে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশি দেলোয়ার ও মনির, সেটা অন্যান্য শ্রমিকের জন্য হতে পারে দারুণ উদাহরণ।
প্রবাসী দেলোয়ারের বাবা মিন্টু মিয়া বলেন, আমার দুই ছেলের কাজের সুবাদে তাদের মালিক একজন সৌদি নাগরিক আমাদের মতো এমন অজপাড়াগাঁয়ের গরীবের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন তা আমার কল্পনাতেও ছিল না। বাবা হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি ও খুশির বিষয় আর কি হতে পারে। এক সপ্তাহ ধরে তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। আমাদের সঙ্গে খাবার খেয়েছেন, মাছ ধরেছেন, বাজার করেছেন। তিনি পরিবারের সদস্য হয়ে গেছেন। আমার আরেক ছেলেকেও তিনি নিয়ে যাবেন। নিজে উপস্থিত থেকে ছেলেদের বিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাকে আদর-আপ্যায়ন করার চেষ্টা করছি। যাতে উনি বাংলাদেশ ও এদেশের মানুষ সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা নিয়ে যেতে পারেন। উনাদের সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্কটা যেনো আরও সুদৃঢ় হয়।
মরুভূমির দেশের মানুষ হয়ে এমন নির্মল প্রকৃতির ছোয়া ও সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেদ্দার উদ্দেশে ফিরতি বিমান ধরবেন আবু নাসের।