বিশেষ প্রতিবেদক :
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বিবস্ত্রিত নারীর ঘটনা সর্বশেষ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, গোটা দেশে মূলত সংকট, সমস্যা কিংবা অন্ধকার সেখানে। অন্ধের মত অর্থের পেছনে গন্তব্যহীন দৌড়, ব্যক্তি পরিবার সমাজ দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। বেগমগঞ্জের ঘটনা সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। যে নারী ধর্ষিতা হয়েছে, তাতেও সমস্যা নেই। ধর্ষণের খবরও হয়নি। বিবস্ত্র হবার খবরও আসেনি। ৩২ দিন পর যখন টাকা ভাগের বিষয় আসলো তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টাকার লোভই ভিডিও প্রকাশ করা হলো।
সর্বশেষ খবর হলো নির্যাতিতা নারীর স্বামী দেলোয়ার কিংবা বাদল বাহিনীকে ভাড়া করেছিল টাকার জন্য। টাকার জোগাড় হয়নি। তাই বিবস্ত্র করে ছেড়ে দেয়া হলো। ঐ নারীকে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান আগেও ধর্ষণ করেছে। বার বার ধর্ষণ করতে পারত। কোন সমস্যা ছিল না। সমস্যা হয়ে গেলো, টাকার হিসাব, টাকার ভাগ না পাওয়া।
নারীকে বিবস্ত্র করে হলেও টাকা চাই। নিজের স্ত্রীকে ধর্ষণ করিয়েও টাকা চাই। টাকার দরকার। এই টাকার দরকারের ভয়াবহতা এখন ঘরে ঘরে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। টাকা কামাই করতে হবে। বৈধ-অবৈধ যেকোন পন্থায়। বৈধ পন্থায় টাকা দিয়ে এখন দেশে দু’জনের সংসারও চলে না। বাড়ি, গাড়ি, সোনা, জায়গা-জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, কারখানা, দালান কোঠা এমনকি স্বাভাবিক জীবনও চলে না। তাই যে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছে অবৈধভাবে কামাই করছে।
ব্যাংক লুট, ঔষধ লুট, হাসপাতাল লুট, মাছ লুট, উন্নয়ন লুট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা সবক্ষেত্রে লুটের রাজত্ব। লুটের মাধ্যমে কোটি টাকা, শত সহস্র কোটি টাকা আয় করে চলছে তো চলছে কিছু মানুষ। ফলে এর প্রতিফলন সর্বত্র। টাকা মেরে দিলে ফেরত দিতে হয় না। ভেজাল মেশালে কঠোর শাস্তি হয় না। উন্নয়নের টাকা মেরে দিলে পাপ হয় না। সাহেদ, সাবরিনা, রাজ্জাক, সেলিম, সম্রাট, পাপিয়া গং, ব্যাংকের কর্মচারি থেকে হাসপাতালের আয়া, বিচারকের পিয়ন থেকে প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত অবৈধ আয়ের মাধ্যমে টাকা কামাই করে।
স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা, চিকিৎসকরা, সাংবাদিক, সম্পাদকরা, পুলিশ-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই অবৈধতার সঙ্গে যুক্ত। অবৈধতার এত বেশি মর্যাদা যেখানে বৈধতার মান যায় যায়। অবৈধ আয়ের কত শক্তি। কিডনি পাচার, নারী পাচার, মানুষ বিক্রির টাকা দিয়ে একদিনে দু’টি আসনের সংসদ সদস্য হয়ে যাবার ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিকার না পাওয়াতে অবৈধতার মাত্রা ও সম্মান বেড়ে গেছে।
বেগমগঞ্জের ঘটনা কেন? এ ধরনের বহু ঘটনা আছে। একটি পত্রিকার সম্পাদকের শত বছরের ঘরবাড়ি দখল করে নিলো আব্বা মার্কা এমপির লোকেরা। মন্ত্রী, সচিব, এমপি, পুলিশ সেখানে অসহায়। তাই আসল জায়গায় হাত দিতে হবে। অবৈধতা থামাতে হবে। তা-না হলে সামাজিক ব্যাধি দুর হবে না।