আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারা দেশে নতুন করে অপরাধীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। অস্ত্র উদ্ধার ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ বা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ অভিযান চালানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। অভিযান চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়া গেছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে পুলিশের সব কটি ইউনিটের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করার কথা রয়েছে আইজিপির।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের আগে যেকোনো ধরনের সহিংসতা রোধে বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই পুলিশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযানে সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেবে পুলিশ সদর দপ্তর। সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালান রোধেও বিশেষ নজরদারিও রাখবে পুলিশ।
সম্প্রতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। এই সুযোগে একটি মহল দেশে সহিংসতা করে ফায়দা নিতে চাইছে বলে মনে করছে পুলিশ। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কথা বলায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে। ওই সময় বৈধ অস্ত্রগুলো কোথায় আছে তার হিসাব মেলানো হবে এবং জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হবে। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার এবং পেশাদার সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সারা দেশেই এই বিশেষ অভিযান চালানো হবে। তবে অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না।’
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরে ইউনিটপ্রধানদের নিয়ে আইজিপি যে বিশেষ বৈঠক করেছেন, সেখানে বিশেষ অভিযান চালানোর ব্যাপারে সবাই মতামত দিয়েছেন। এ জন্য অপরাধীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক নেতাদের ঘায়েল করার জন্য কোনো ধরনের অভিযান হবে না। অভিযানটি মূলত হবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন সীমান্তে বেড়ে গেছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা। মাস দুয়েক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি সীমান্ত এলাকা থেকে আটটি পিস্তল ও ৪০ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। তা ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ১০০ কেজি সালফার, সাতটি ডেটোনেটর ও চারটি বিস্ফোরক স্টিক। তাদের ধারণা, জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৩০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে বাচ্চুর ব্যক্তিগত সহকারী মানিক গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় তাদের দুজনকেই গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দারা। প্রথমে বিষয়টি ছিনতাইকারীর হাতে গুলিবিদ্ধ বলে প্রচার করা হলেও পরে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় বাচ্চুর ব্যক্তিগত অস্ত্র থেকেই গুলি করা হয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইসমাইল হোসেন নিজেই তার অস্ত্র দিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী মানিককে গুলি করেন তার নিজের ফ্ল্যাটে। তারপর ছিনতাইয়ের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনের আগে আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে প্রতিপক্ষকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করতে পারেন অনেকে। এ কারণে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা আসছে। আবার সম্ভব্য প্রার্থীরা নিজ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এসব দিক বিবেচনা করেই পুলিশ পদক্ষেপ নেবে।
তারা জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আইজিপি রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে বিশেষ অভিযানের বিষয়ে এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পুলিশ সুপার বলেন, শিগগির বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে। এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত কিছু বার্তা এসেছে। তবে রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করতে বারণ করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।