দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়; কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। নৌকা ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে; বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও সেবা করার সুযোগ দেবেন সেটাই আমি চাই।’
আজ বুধবার বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকারের সাড়ে ১৪ বছরে নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। আজকে হতদরিদ্র বললে নেই, মাত্র ৫ পারসেন্ট। আল্লাহর রহমতে সেটিও থাকবে না। কোনো মানুষ হতদরিদ্র থাকবে না। ছিন্ন কাপড় পরতে হয় না, বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে পরাতে হয় না। প্রত্যেক মানুষের আজ কাপড় কেনার আর্থিক সচ্ছলতা এসে গেছে। যে এক বেলা ভাত পেত না, খাবার পেত না, আজকে দুই বেলা, তিন বেলা খাবার সুযোগ হয়ে গেছে মানুষের। আমরা সে ব্যবস্থা করেছি। এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, এ দেশের মেহনতি মানুষ, প্রত্যেকের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগকে কৃষকের বন্ধু অভিহিত করে দলের সভাপতি বলেন, ‘২০১০ সালে আমরা কুড়িগ্রামে প্রথম এসে ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছিলাম। একজন কৃষক ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। কৃষক ভর্তুকির টাকা ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তুলতে পারছেন। ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে আমরা কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। যাতে ওই কার্ড দেখে কৃষকেরা দোকান থেকে কৃষিপণ্য কিনতে পারে, উৎপাদনের আগে আমরা সেই ব্যবস্থাও করেছি।’
কৃষকের জন্য সারের দাম কমানোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অথচ খালেদা জিয়া কী করেছিল, কৃষক সার চেয়েছে, গুলি করে মানুষকে হত্যা করেছে। ওই গাইবান্ধা মহিমাগঞ্জেই তো হত্যা করল খালেদা জিয়া, বাপ-ছেলে গুলিতে একসঙ্গে মারা গেল। আমরা ছুটে গেছি সেই মানুষদের কাছে। ১৮ জন কৃষক হত্যা করেছিল তারা। আর এখন কৃষককে সার খুঁজতে হয় না, আমরা কৃষকের ঘরে সার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা কথা দিয়েছিলাম, সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিব। আজকে আমরা সব ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খালি হাতে আসিনি। আপনারা দেখেছেন, আমি কতগুলো প্রকল্পের উদ্বোধন করলাম। আমি জানি না আগে কখনো এতগুলো প্রকল্প আর কেউ দিয়েছে কি না। আমরা রংপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমিক প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। সেখানে ট্রেনিং হবে পল্লী উন্নয়নের কাজ করতে পারবে, সে ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছি। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রংপুর শিশু হাসপাতাল এবং রংপুরে পুলিশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রংপুরে রেলওয়ের স্টেশন নির্মাণ করে দিয়েছি। এলেঙ্গা রংপুর চার লেন মহাসড়কে বর্ধিত করা হয়েছে। বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প উত্তরের শিল্পায়নের নতুন মাত্রা যোগ হবে। শ্যামপুর সুগার মিল বন্ধ আছে, তা চালু করার ব্যবস্থা করা হবে।’
সমাবেশে যোগদানের আগে এগুলোসহ ২৭টি বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টার রংপুরের উদ্দেশে রওনা হন। সার্কিট হাউস মিলনায়তনে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর বিকেল ৪টা ১১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জনসভার উদ্দেশে ভাষণ দেওয়া শুরু করেন।
ভাষণ শেষে সভামঞ্চে উপস্থিত জনগণ ও নেতা-কর্মীর প্রতি কৃজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদায়ের আগে বলে যাই, রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নেই। আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই। খোদা হাফেজ, জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম শাহাদাত হোসেন।