ময়মনসিংহে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হল- মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম (৬৫) ও মাহাবুব আলম মন্ডল (৭০)। পরিবারের সাথে ঈদ করতে এসে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছেন পলাতক এ দুই আসামি।
রোববার (২৫ জুন) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা।
পুলিশ জানায়, জেলার ঈশ্বরগঞ্জ ও ফুলপুর উপজেলার মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুটি মামলায় দুই রাজাকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে রাজাকার মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমকে (৬৫)। তিনি উপজেলাটির সোহাগী ইউনিয়নের বগাপুতা গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এবারের ঈদে স্থানীয় এক আত্মীয় বাড়িতে ঈদ উদযাপনের জন্য গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ আরও জানায়, হাসেম ১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ হোসাইন আহম্মদের নির্দেশে আলবদর হাসেম ১৫ থেকে ১৬ জন রাজাকার নিয়ে সোহাগী বাজারে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহসিলদার, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক ও সোহাগী মাদ্রাসার হিসাব রক্ষক কাঠালিয়া গ্রামের মো. নূরুল হক ওরফে তারা মিয়ার বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ও তাকে গুম করে ময়মনসিংহ শহরে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদে ফেলে দেয়। এছাড়া অভিযুক্ত রাজাকাররা আওয়ামী লীগ সমর্থক নিরীহ মানুষ, হিন্দু ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র করকে অপহরণ করে আঠারবাড়ি পাকিস্তানি ক্যাম্পে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলে।
অপরদিকে জেলার ফুলপুর উপজেলা ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধ মামলার ১৩ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলার পলাতক আসামী মাহাবুব আলম মন্ডলকে (৭০) গ্রেপ্তার করেছে ফুলপুর থানা পুলিশ। ময়মনসিংহ নগরীর তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকা থেকে রোববার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাহাবুব মন্ডল জেলার ফুলপুর উপজেলার পাশ্চিম বাখাই গ্রামের মৃত বসির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে। ২০০৯ সালে মামলা হওয়ার পর অন্তত ১৪ বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা মাহাবুব রাজাকার ঈদ উপলক্ষে ময়মনসিংহে আসেন। পুলিশ খবর পেয়ে মেয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাহাবুবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ রয়েছে তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে গঠিত স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। তার বিরুদ্ধে মামলার বাদী পরিমল চন্দ্র দাসের পিতা যোগেশ চন্দ্র দাসসহ তার অন্যান্য আত্মীয়সহ মোট নয় জনকে টেনে-হিচড়ে কংস নদীর পাড়ে নিয়ে রাইফেল ও স্টেনগান দিয়ে নির্বিচারে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।
যুদ্ধ চলাকালীন মাহাবুব পাক পাকিস্তানিদের সহযোগিতায় বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করত। এলাকায় ত্রাস কায়েম করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের উপর অমানুষিক নিযার্তন করে অসংখ্য নিরীহ মানুষের বাড়ি পুঁড়িয়ে দেয় এবং বাড়িতে থাকা সম্পদ লুণ্ঠন, নারী ধর্ষণ ও হত্যাসহ জঘন্য অপরাধ চালিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সাধারন মানুষের জমিজামা আত্মসাৎ করে তাদের উপর ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে।
আসামি মাহাবুব ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিএনপির ফুলপুর সদর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং ২০১২ থেকে ১৪ সালে ফুলপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমীর হিসেবে মনোনীত ছিল এবং গোপনে নিজের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড অব্যহত রাখে।
জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, দুই আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে হস্তান্তর করা হবে।