নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিদ্যমান পিলারের গায়ে খোদাই করে লেখা ‘পাক/পাকিস্তান’ পরিবর্তন করে ‘বিডি/বাংলাদেশ’ বসিয়েছে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)।
বুধবার (৭ অক্টোবর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিজিবির পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান।
তিনি বলেন, সীমান্তে মোট ১০ হাজার ২৪০টি পিলার ছিল, যেগুলো অনেক আগের। এগুলোতে ‘পাক’ অথবা ‘পাকিস্তান’ লেখা ছিল। সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা এগুলোকে ‘বিডি’ বা ‘বাংলাদেশ’-এ কনভার্ট করার বিষয়টি আমাদের বিবেচনা করতে বলেন। পরে ডিজি (মহাপরিচালক) মহোদয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী এগুলো বদলের সিদ্ধান্ত নেন। বিজিবি সদস্যরা নিজেদের ঘাড়ে সিমেন্ট-বালু নিয়ে নিজেদের পরিশ্রমে সীমান্তে সব পিলারে এ লেখা বসিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কর্মকাণ্ডের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এ পরিচালক।
তিনি জানান, বিজিবি পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ৮১৫ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন। এছাড়া ৭৩টি আধুনিক কম্পােজিট বিপি নির্মাণের অনুমােদন গ্রহণ করা হয়েছে। বিজিবি ‘আলােকিত সীমান্ত প্রকল্প’র মাধ্যমে সীমান্তবর্তী কর্মহীন ও অসহায় মানুষের মাঝে ভ্যান গাড়ি, সেলাই মেশিন, গবাদি পশু, টি-স্টল বিতরণ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
পাশাপাশি বিজিবির ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থার সহায়তায় এ পর্যন্ত সীমান্তবর্তী ২৮টি জেলার প্রায় এক লাখ ২০ হাজার গরিব, দুস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
রুটিন সংবাদ সম্মেলনের পরপরই শুরু হয় সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব।
গত কয়েক বছরে বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ অনেক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। দুই মাস ধরে ‘বন্দুকযুদ্ধ’র ঘটনা ঘটছে না। পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনার প্রভাবে এমনটি হচ্ছে কি-না? এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে বিবিজি পরিচালক বলেন, বিজিবি কেন, কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই ‘বন্দুকযুদ্ধ’র ঘটনা ঘটাতে চায় না। আমাদের একমাত্র টার্গেট থাকে অপরাধীকে গ্রেফতার করা। গ্রেফতারের সময় অনেক অপরাধী আমাদের আক্রমণ করে, গুলি ছোড়ে, তখন আত্মরক্ষার্থে এবং সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে এমন স্টেপ নেয়।
‘আপনাদের পরিসংখ্যানের কোথাও পেলাম না যে গত ৬ মাসে বিএসএফের হাতে কতজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে? এই তথ্য কি আপনাদের কাছে আছে?’ আরেক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক বলেন, সম্প্রতি বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএসএফ মহাপরিচালককে (রাকেশ আস্থানা) এ বিষয়ে বলা হয়েছে। এরপর থেকে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
‘সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকের চোরাচালান ধরা পড়ার বিষয়ে সাক্ষাৎকারে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে মাদকের কোনো কারখানা নেই। মাদক আসে সীমান্ত দিয়ে, সীমান্তরক্ষী বাহিনী যদি এগুলো ঠেকিয়ে দিতে পারে, তাহলে দেশে আর মাদক ঢুকতে পারবে না। এ বিষয়ে বিজিবির কী মন্তব্য?’ আরেক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে ফয়জুর রহমান বলেন, ‘এটা যিনি বলেছেন সেটা তার ব্যক্তিগত মতামত বা অভিমত হতে পারে। এটা পুলিশ সদরদফতরের বক্তব্য নয়। আমরা প্রায়ই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা সরাসরি পুলিশ সদরদফতরের সাথে তথ্য বা মতামত শেয়ার করি। এছাড়া দেশের চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা হাজির রয়েছেন। সীমান্ত দিয়ে যে মাদকই আসছে আমরা সেগুলো জব্দ করছি।
মাদক কারবারে বিজিবি সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাহিনীর এ পরিচালক বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় আইনের পাশাপাশি বিজিবির নিজস্ব আইন রয়েছে। আমরা সেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দায়িত্বপালন করি। তাছাড়া বিজিবি অনেকবার রিফর্মও করা হয়েছে। এটা বলতে পারি যে, সীমান্তে মাদকের সাথে বিজিবির সম্পৃক্ততা জিরো।’
মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্তে সেদেশের সেনাবাহিনীর সশস্ত্র উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে দেখা গেছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির অপারেশন্স পরিচালক বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের কতটুকু উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা নিশ্চয়ই আরও ভালো জানেন। আমাদের সীমান্তরক্ষার জন্য যতটুকু দরকার, ঠিক ততো সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। সীমান্তে আমাদের লোকজন সতর্ক রয়েছেন। দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিজিবির বর্তমানে জনবল বেড়েছে, আমাদের অংশে যে দায়িত্ব রয়েছে, তার সর্বোচ্চটাই আমরা নিয়োজিত করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত আট মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ লক্ষাধিক অভিযান পরিচালনা করে মােট ৩৭২ কোটি ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি। জব্দকৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, তিন লাখ এক হাজার ৮৩০ বােতল ফেনসিডিলসহ নানা মাদক।