‘আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এই উত্থান কীভাবে রোধ করা যাবে, এটা যেমন রাজনৈতিক সমস্যা, তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিক সমস্যাও।’ সম্প্রতি অভিনয়শিল্পী সংঘের একটি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। তিনি বরেণ্য অভিনেতা মামুনুর রশীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে তৈরি করে দেখান। আর বারবার যদি হিরো আলমকে নিয়ে আপনাদের রুচিতে বাধে, তাহলে হিরো আলমকে মেরে ফেলেন।’
মামুনুর রশীদ জানান, হিরো আলম সম্পর্কে আগে তিনি খুব একটা জানতেন না। তবে নাট্যাঙ্গনের কয়েকজন তাঁকে হিরো আলমের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন।
এর পর থেকেই হিরো আলমকে নিয়ে বিরক্ত ছিলেন তিনি। মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কয়েকজন বলার পর খোঁজ নিয়ে দেখলাম, হিরো আলম যখন সংসদ নির্বাচন করছে, তাঁকে কেউ একজন একটা গাড়ি দিচ্ছে। সেই গাড়ির আবার ৯–১০ বছরের ফিটনেস নেই। এই হিরো আলম নিয়ে আমি অনেক দিনই বিরক্ত ছিলাম। বিরক্ত ছিলাম এই কারণেও, আমাদের দেশের মানুষের তো রুচির দুর্ভিক্ষ হয়ে গেছে।’
তাঁর বক্তব্যের এক দিন পর গতকাল সোমবার ফেসবুক লাইভে আসেন হিরো আলম। গতকাল রাত আটটার দিকে প্রথমে তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘গত রোববার একটি সাক্ষাৎকারে দেশের স্বনামধন্য নাট্যজন শ্রদ্ধেয় মামুনুর রশীদ স্যার আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। আমি অতিক্ষুদ্র মানুষ। সততা ও সৎসাহসই আমার একমাত্র সম্বল। মামুনুর রশীদ স্যারের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রাত ১০টা ৩০ মিনিটে লাইভে কিছু কথা বলব। শাসন করা তাঁকেই মানায়, আদর করেন যিনি।’
এরপর রাতে তিনি লাইভে এসে বলেন, ‘আমি নিজ যোগ্যতায়, নিজে পরিশ্রম করে আজ আলম থেকে হিরো আলম। আমাকে নিয়ে যাঁদের রুচি হয় না, সেই রুচিবান লোকেরা হিরো আলমকে তৈরি করেননি। এ জন্য রুচিবানেরা বাংলাদেশে রুচি আনতে চাইলে হিরো আলমকে মেরে ফেলে দেন।’
হিরো আলম আরও বলেন, ‘আপনাদের টাকা আছে, শ্রম আছে, অনেক কিছুই আছে কিন্তু আপনারা হিরো আলমকে তৈরি করবেন না। তৈরি করতে পারবেনও না।’
মামুনুর রশীদের কাছে আহ্বান জানিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘মামুনুর রশীদ স্যার, আসুন আমাকে তৈরি করুন। আমাকে তৈরি করতে এলে বাংলাদেশের বড় বড় লোক যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই আপনাকে ধুয়ে দেবেন। যে মামুনুর রশীদের মতো লোক হিরো আলমকে নিয়ে নাটক বানাচ্ছেন, সিনেমা বানাচ্ছেন। এমন হলে আমাকে তৈরি করবে কে? রুচির পরিবর্তন কোন জায়গা থেকে হবে?
রুচিবান লোক বাংলাদেশে কোনো দিনও হবে না। কারণ, যাঁরা রুচিবান লোক, তাঁরা রুচিদার লোক তৈরি করবেন না। কারণ, আপনারা তেলওয়ালা মাথায় তেল দেবেন, যাঁদের টাকা আছে, তাঁদের দাম দেবেন। যাঁদের চেহারা সুন্দর, তাঁদেরই মূল্য দেবেন’, যোগ করেন হিরো আলম। লাইভে আত্মহত্যারও হুমকি দিয়েছেন ইউটিউবার হিরো আলম। তাঁর ভাষায়, ‘আমি কী অন্যায় করেছি। কেন আমার সবকিছু নিয়ে মানুষ টর্চার করে। এই সমাজ কেন আমাকে রুচিসম্মত লোক বানাতে পারল না। আপনাদের যদি এতই রুচিতে বাধে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে বলে আমাকে দেশ থেকে বের করে দেন, না হলে জেলখানায় বন্দী করে রাখুন। অন্যথায় লাইভে এসে আত্মহত্যা করে দেশটাকে রেহাই দিয়ে যাব।’
হিরো আলম বলেন, ‘আমি মরে গেলে দেশের রুচিসম্মত লোক দায়ী থাকবেন। রুচি কী বুঝায়—আমি বুঝি না। আমি তো রুচি নিয়ে দুনিয়াতে আসি নাই।’ মামুনুর রশীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন হিরো আলম বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য আপনার মতো লোকেরা আমাকে চেনেন।’