এক ছেলে ও দুই মেয়ে থাকেন রাজধানীর শাহজাদপুরে। সেখানে একটি গার্মেন্টে কাজ করেন তারা। ছেলেমেয়ের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল তোতা মিয়ার। তিনি স্ত্রী রেজিয়া খাতুন, নাতি শিশু ইয়াসিনকে নিয়ে ধোবাউড়ার মুন্সিরহাট থেকে রওনা হন মাইক্রোবাসে। মাঝপথেই মাইক্রোবাস বিস্ফোরণে পুড়ে মারা যান রেজিয়া। দগ্ধ হয়ে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন অন্য দুইজনও।
ত্রিশাল থানায় লাশঘরের সামনে মরদেহের অপেক্ষায় রোজিনার মেয়ে মিনারা খাতুন। ‘আম্মা তুমি কই গেলাগা, ছয় ভাই-বোনকে রাইখ্যা তুমি কেমনে গেলা, অহন কারে আমরা আম্মা কইয়া ডাকমু’- এমন কথা বলতে বলতে বিলাপ পারছিলেন তিনি।
সেই মাইক্রোবাসে ছিল নারী-শিশুসহ আরও অন্তত ১০-১২ জন। রোববার রাত ২ টার পর ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রাঙামাটি এলাকায় পৌঁছালে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। মুহুর্তেই বিকট শব্দে ঘটে বিস্ফোরণ। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় চারজন। দগ্ধ হন আরও পাঁচজন।
নিহতরা হলেন- ধোবাউড়া উপজেলার খামারবাসা গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী দোলেনা খাতুন (৪৫), তোতা মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৫৫), মুন্সিপাড়া গ্রামের মো. রুবেলের ছেলে আশিক (৭)। নিহত অপর এক নারীর পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
ঢাকার শাহজাদপুরে হোটেল ব্যবসার সুবাদে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি সেখানেই থাকতেন আক্কাস আলী। তার পরিবারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সুমুন্দি শাহাবুদ্দিনের মেয়ে তানজিনার বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ধোবাউড়া থেকে সপরিবারে ঢাকায় নিজ কর্মস্থলে ফিরছিলেন আক্কাস। তাদের বিয়ের আনন্দ আর ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এর আগেই পথে দুর্ঘটনায় কেঁড়ে নেয় সব আনন্দ। মাইক্রোবাস বিস্ফোরণে হারান স্ত্রী দোলেনাকে। আক্কাসও পাঞ্জা লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে।
ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনায় নিহত দোলেনা খাতুনের স্বামী গুরুতর আহত আক্কাস আলীকে (৫২) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। খামারবাসা গ্রামের মেহের আলীর ছেলে তোতা মিয়া (৬০), হামিদুলের ২ বছর বয়সী শিশু ইয়াসিন, নিহত শিশু আশিকের বাবা রুবেল (৩০) ও মা ফেরদৌসী (২৬) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আরও দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফিন্সের সহকারী পরিচালক মাসুদ সরদার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাস থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করে। আমরা ধারণা করছি, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে সিলিন্ডার গ্যাস লিকেজ হয়ে গাড়িতে আগুন ধরে যায়।