জামালপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এবার ব্যাপকহারে সরিষা চাষ করেছে কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফুল ভালো হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা কৃষকদের। তাছাড়া ফুল থেকে মধু আহরণের জন্য সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ-বাক্স স্থাপন করেছে মৌয়ালরা। কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
জামালপুরের যমুনা-ব্রহ্মপুত্রসহ নদ-নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও জেলার সমতল কৃষি জমিতে প্রতিবছরই সরিষা চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমেও জেলার সবগুলো উপজেলায় ব্যাপকহারে সরিষা আবাদ করেছে কৃষকরা। এখন দিগন্তজুড়ে ফসলের মাঠে যেন হলুদ রংয়ের আবরণ, সরিষার হলুদ ফুল আর ফুলের সৌরভ চারিদিকে। গেল বারের তুলনায় এবছর সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে, তাই আবাদ হয়েছে বেশী। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও ন্যায্য বাজারমূল্য পেলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষকরা।
তবে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করায় জ্বালানী খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সার, বীজ ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সরিষা চাষে কৃষকদের খরচ হয়েছে বেশী। জমি চাষ, সার, বীজ, কীটনাশক বাবদ প্রতি একরে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার জন্য ফুল-ফসল ভালো হলেও ন্যায্য দাম না পেলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে কৃষকরা। তাই সরিষা আবাদের খরচ পুষিয়ে উঠতে ন্যায্য বাজারমূল্য দাবী করেছে কৃষকরা।
এদিকে সরিষা ফুলের মধু আহরণের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছে মৌয়ালরা। সরিষা ক্ষেতের পাশে স্থাপন করা হয়েছে সারি সারি মৌ-বাক্স। সেখানে ব্যাস্ত সময় পার করছে মৌয়াল ও শ্রমিকরা। এখান থেকে আহরিত মধু দেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। সরিষা মৌসুমে প্রতিটি বাক্স থেকে ৩ থেকে ৪ বার মধু আহরণ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে ১২ কেজি মধু আহরণ করা হয়। তাছাড়া সরিষা ক্ষেতে মৌ-চাষের জন্য ফুলের পরাগায়ন ভালো হয়, এতে সরিষার ফলন ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলছেন, জামালপুরে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী সরিষা আবাদ হয়েছে। মৌ-বক্স স্থাপনের ফলে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। চলতি বছর ২৭ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩২ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর বেশী। এ পর্যন্ত মৌ-বক্স স্থাপন করা হয়েছে ৫ হাজার ৯শ ২৬টি যা থেকে মধু আহরণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৮শ ৭০ কেজি।