অন্ধকার ভেদ করে উঠলো নতুন ভোরের সূর্য। আকাশছোঁয়া গরিমা নিয়ে উড়লো লাল-সবুজের বিজয় পতাকা। অন্যরকম এক সকাল। মুক্ত আকাশের বিজয়ের প্রতিধ্বনি। জয় বাংলার বজ্রতুল্য উচ্চারণ সবার কন্ঠে। স্মরণকালের ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিজয় মিছিল। অগ্নিদীপ্ত উল্লাসে বিজয় আনন্দে মেতে উঠলো ময়মনসিংহবাসী।
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বরের দৃশ্যপট ছিল এমনই। এইদিনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে পাকসেনাদের কবল থেকে ময়মনসিংহকে মুক্ত করে।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ১১ নম্বর সেক্টরের এফ জে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ১৩ রাজপুত রেজিমেন্ট ও ৯৫ ব্রিগেডের ৫৭ মাউন্ট ডিভিশন যৌথভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা করে। পরে মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা হালুয়াঘাট দিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তানি সেনারা টিকতে না পেরে পিছু হটে।
৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা প্রথমে ফুলপুর ও পরবর্তীতে তারাকান্দা, শম্ভূগঞ্জ ও ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে টাঙ্গাইল জেলা হয়ে ঢাকায় পালিয়ে যেতে শুরু করে। তবে পাক সেনারা পালিয়ে যাওয়ার আগে স্থানীয় রাজাকার ও আল বদরদের সহায়তায় অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ১০ ডিসেম্বর সকালে হালুয়াঘাট থেকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা।
মিত্রবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার সানথ সিং বাবাজী ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে শহরে প্রবেশ করেন। তাদের নেতৃত্বেই শুরু হয় বিজয় মিছিল। চারদিক থেকে বিজয়ের আনন্দে আবাল বৃদ্ধরা যোগ দেয় মুক্তির এ আনন্দ মিছিলে। হাজার হাজার মানুষ তাদের স্লোগান দিয়ে সার্কিট হাউজে গিয়ে মিলিত হয়।
সাদা-কালো একটি ছবি। দৃঢ় পায়ে উল্লাস-ধ্বনি করতে করতে এগিয়ে আসছে বিজয় মিছিল। মিছিলের অগ্রভাগে পাশাপাশি হাঁটছিলেন মিত্রবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার সানথ সিং বাবাজী এবং মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। তারা দুইজনই ছিলেন পাশাপাশি। তাদের পাশে, পেছনে যেন ভেঙে পড়ছে মানুষ। সবার কন্ঠে এক ধ্বনি ‘জয় বাংলা।’
দীর্ঘ ৪৯ বছর আগে তোলা মুক্ত ময়মনসিংহের বিজয় মিছিলের সেই ছবিই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল সাক্ষী।