ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের ঝুঁকিপূর্ণ দর্শক গ্যালারি সংস্কারে দুই লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে এসে এ ঘোষণা দেন তিনি।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে এ খেলার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমির খেলা অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র হয় ম্যাচটি।
খেলা শুরু করার আগেই মাইক হাতে নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি যখন ‘হ্যালো গৌরীপুর’ লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি তখন দেখি কমেন্টে লেখা- ‘ভাই গ্যালারিটা ভাঙা’। তখনই আমি বুঝতে পেরেছি যে গ্যালারিটা ঠিক করতে হবে। আমি ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, আ.লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বলেছি আগামী বছরের মধ্যে গ্যালারিটা ঠিক করে দিবেন। যেদিন গ্যালারির কাজ ধরবে, সেই সময় পপি ভাবি (উপজেলা আ.লীগের সভাপতি নিলুফার আনজুম পপি) যেন আমাকে ফোন দেয়। আমি হাইকোর্ট থেকে ব্যরিস্টার হিসেবে টাকা ইনকাম করি। ময়মনসিংহের মক্কেলের কাছ থেকে মোটামুটি দুই লাখ টাকা ইনকাম করেছি। এই দুই লাখ টাকা আমি এই গ্যালারির সংস্কারের জন্য দিয়ে দিবো।
তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহের টাকা আমি আর সিলেট নিবো না। আমি দুই লাখ টাকা বরাদ্দ করে যাচ্ছি, ভাবি যেদিন আমাকে বলবেন সেদিনই আমি টাকাটা পাঠিয়ে দিবো। আমরা চাইলে পারি না, এমন কোন জিনিস নাই। একটা মাত্র মাঠ, এই মাঠে যদি গ্যালারি ভালো না হয় তাহলে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আর যদি বলেন যে কোন টাকাই দিতে পারবেন না, তাহলে আমার বাবার চার শতক জমি এখনো বাকি আছে, সেটি বিক্রি করে হলেও এই গ্যালারিটা করে দিবো।
গৌরীপুরবাসীর আপ্যায়নে মুগ্ধ ব্যারিস্টার সুমন এখানে আত্মীয়তা করার ইচ্ছাও পোষণ করেন। তিনি বলেন, এখানে যে সুন্দর খেলার মাঠ, গৌরীপুরবাসী যে আদর আপ্যায়ন করেছে তাতে সিলেটবাসীদের বলতে চাই, আপনারা চোখ বন্ধ করে গৌরীপুর মেয়ে বিয়ে দিতে পারবেন। আমার বয়স ৪৪, বিয়েও আমি করে ফেলেছি। আমার তো বিয়ের করার সুযোগ নাই। তবে আমার ৯ বছর বয়সি একটা ছেলে আছে, আমেরিকায় থাকে। ছেলে বিয়ের উপযুক্ত হলে গৌরীপুর আত্মীয়তা করার ইচ্ছা আছে।
তরুণদের উদ্দেশ্য করে সুমন বলেন, জন্ম যেখানেই হোক আপনারা যদি ঠিক মতো কষ্ট করেন তাহলে কোন কিছুই আপনাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমাকে দেখেন, যে ছেলেটা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারতো না এরপরো শুধু কর্ম দিয়ে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারছে। অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছে। যতদিন বেঁচে আছি শুধু ফুটবলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিতে চাই। বিশ্বকাপে খেলতে চাই আমরা।
এদিকে ব্যারিস্টার সুমনের খেলা দেখতে নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক আগেই কয়েক হাজার দর্শকের সমাগম ঘটে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে। দর্শকরা মাঠের চারপাশে এবং ঝুঁকিপূর্ণ গ্যালারি ছাড়াও উঁচু গাছের মগডালে অবস্থান নেন। মাঠে হাজির হয়েই চারপাশে প্রদক্ষিণ করে হাত নেড়ে দর্শকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ব্যারিস্টার সুমন। এসময় বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে হাজারো দর্শক।
এ আয়োজনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলুফার আনজুম পপির সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাসান মারুফ, পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। পরিচালনায় ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা।